অস্ট্রেলিয়া ও পাপুয়া নিউগিনির মধ্যে একটি নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে। এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব বিস্তারের মোকাবিলা করা। আগামী বুধবার এই চুক্তিটি সই হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে পাপুয়া নিউগিনির স্বাধীনতা দিবসের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করা হবে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ জানিয়েছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী আরও সুসংহত হবে। এর ফলে পারস্পরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে এবং সামরিক সরঞ্জাম ও বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় আরও জোরদার হবে।
এই চুক্তির অংশ হিসেবে, পাপুয়া নিউগিনির নাগরিকরা চাইলে অস্ট্রেলীয় সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে তারা অস্ট্রেলিয়ার নাগরিকত্ব লাভের সুযোগ পাবে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই প্রতিরক্ষা চুক্তিটি অস্ট্রেলিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর মাধ্যমে তারা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব আরও দৃঢ় করতে পারবে। এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি এবং বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তির প্রেক্ষাপটে, অস্ট্রেলিয়া চায় নিরাপত্তা ক্ষেত্রে তাদের প্রধান অংশীদার হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে।
যুক্তরাষ্ট্রও এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। পাপুয়া নিউগিনির স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেশটির উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টোফার ল্যান্ডাউ পোর্ট মোর্সবিতে উপস্থিত থাকবেন।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০২৩ সালে অস্ট্রেলিয়া ও পাপুয়া নিউগিনির মধ্যে একটি নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যা দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও বাড়ায়। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাপুয়া নিউগিনির একটি আলাদা নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।
অনেকের আশঙ্কা ছিল, এই চুক্তির ফলে পাপুয়া নিউগিনির সার্বভৌমত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নতুন চুক্তিতে অস্ট্রেলিয়ার ‘নিরাপত্তা সহযোগী’ হিসেবে পাপুয়া নিউগিনিকে বেছে নেওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ব্যাপারে বেশ সচেতন।
তারা চায় না, কোনো বিশেষ দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অন্য কোনো পক্ষের সঙ্গে তাদের সহযোগিতা সীমিত করে দিক।
অস্ট্রেলিয়া এর আগে ভানুয়াটুর সঙ্গেও একটি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক চুক্তি করতে চেয়েছিল, কিন্তু দেশটির সরকারের উদ্বেগের কারণে সেই আলোচনা এখনো সম্পন্ন হয়নি।
ভানুয়াটুর আশঙ্কা ছিল, এই চুক্তির ফলে চীন থেকে অবকাঠামো খাতে অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অসুবিধা হতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস জানিয়েছেন, নতুন এই দ্বিপাক্ষিক চুক্তিটি ১৯৭৭ সালের চুক্তিকে প্রতিস্থাপন করবে। তিনি আরও জানান, অস্ট্রেলিয়া ফিজি ও টোঙ্গার সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস