অস্ট্রেলিয়ায় আগামী ৩রা মে ফেডারেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ এবং বিরোধী দলীয় নেতা পিটার ডটন-এর মধ্যে মূল লড়াইটা হবে।
আলবানিজ তাঁর দলের ‘উন্নয়ন অব্যাহত রাখা’ এবং ডটনের ‘খরচ কমানোর প্রতিশ্রুতি’-র কথা উল্লেখ করে নির্বাচনের প্রচার চালাচ্ছেন।
শুক্রবার সকালে, প্রধানমন্ত্রী ক্যানবেরার পার্লামেন্ট হাউসে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন।
এরপর তিনি লেবার পার্টির হয়ে অস্ট্রেলিয়াকে “অনিশ্চিত সময়ে” নেতৃত্ব দেওয়ার কথা বলেন।
অন্যদিকে, বিরোধী দলের নেতা পিটার ডটন ভোটারদের জীবনযাত্রার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
ব্রিসবেনে এক ভাষণে তিনি বলেন, “অস্ট্রেলীয়দের এখন নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে হবে, গত তিন বছরের তুলনায় আজ তারা ভালো আছে কিনা, দেশের উন্নতি হয়েছে কিনা?”
নির্বাচনী প্রচারের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আলবানিজ তাঁর সরকারের স্বাস্থ্যখাতে সহায়তা, শিক্ষার্থীদের ঋণ হ্রাস এবং সম্প্রতি ঘোষিত কর হ্রাসের কথা উল্লেখ করেন।
এমনকি তিনি একাধিকবার একটি মেডিকেয়ার কার্ড তুলে ধরেন।
তিনি আরও বলেন, গত তিন বছরে বিশ্ব অস্ট্রেলিয়ার উপর অনেক চাপ সৃষ্টি করেছে, তবে সরকার “অস্ট্রেলীয় পদ্ধতিতে” সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছে, যেখানে জীবনযাত্রার ব্যয়ভার কমানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য উন্নয়নও অব্যাহত রাখা হয়েছে।
তিনি দাবি করেন, দেশের অর্থনীতি এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রসঙ্গ টেনে আলবানিজ বলেন, অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো “বিশ্বে যা ঘটছে, তা নয়, বরং অতীতের ব্যর্থতায় ফিরে যাওয়া”।
তিনি পিটার ডটনের কর বৃদ্ধি এবং সরকারি পরিষেবা কমানোর নীতির সমালোচনা করেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালের পর জন হাওয়ার্ডের পর অ্যান্থনি আলবানিজ দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চেষ্টা করছেন।
ডটনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সঙ্গে তুলনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আলবানিজকে “নেতিবাচক বিষয়” বারবার তুলে ধরার জন্য অভিযুক্ত করেন ডটন।
তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর এমনটা করার কারণ হলো, তাঁর সরকারের গত তিন বছরের ভালো কোনো কাজ নেই বলার মতো।
যদি তিনি দেশের জন্য ভালো কিছু করতেন, মানুষ যদি গত তিন বছরের চেয়ে ভালো থাকত, তাহলে তিনি তাঁর পরিকল্পনার কথা বলতেন।”
আলবানিজ নির্বাচনে ডটনের বিরুদ্ধে ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি নীতি-নির্ধারণী বিষয় এবং দেশের জন্য আশা ও আত্মবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে একটি প্রচারণা চান।
দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য সমর্থন চেয়ে আলবানিজ বলেন, আগের জোট সরকারের “১০ বছরের জঞ্জাল” পরিষ্কার করতে তিন বছরের বেশি সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, “আজকের বিশ্ব অনিশ্চিত, তবে আমি নিশ্চিত—এখন কাটছাঁট বা ধ্বংস করার সময় নয়, নিচু লক্ষ্য নির্ধারণ বা অতীতের দিকে তাকানোরও সময় নয়।”
ডটনের ৪০,০০০ সরকারি কর্মচারী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনার তীব্র নিন্দা করে আলবানিজ কুইন্সল্যান্ডের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সাহায্য করার জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের উদাহরণ দেন।
ডটন তাঁর কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন, তবে তিনি এখনো নির্দিষ্ট করে জানাননি, কোন কর্মীদের ছাঁটাই করা হবে।
তিনি কর্মীদের স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠানো, ক্ষতিপূরণ দেওয়া অথবা স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী কর্মী কমানোর কথা উল্লেখ করেন।
ডটন “ফ্রন্টলাইন সার্ভিস” রক্ষার কথা বললেও, তিনি কোন কর্মীদের ফ্রন্টলাইন কর্মী হিসেবে বিবেচনা করছেন, তা স্পষ্ট করেননি।
লেবার পার্টির ঘোষিত কর হ্রাসের পরিবর্তে জ্বালানি তেলের ওপর কর কমানোর প্রস্তাবের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে ডটন বলেন, আলবানিজের পরিকল্পনা জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে যথেষ্ট নয়।
বর্তমানে লেবার পার্টির হাতে নিম্নকক্ষে ৭৮টি আসন রয়েছে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে মাত্র দুটি বেশি।
যদিও বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় পার্লামেন্ট “হ্যাং” হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, আলবানিজ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে তাঁর সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসবে।
বিরোধী দল বর্তমানে ৫৪টি আসন ধরে রেখেছে।
ফলে সরকার গঠনে তাদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।
গ্রিনস এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান