অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব জয়ী এক সৈনিক, যিনি আফগানিস্তানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত, তার বিরুদ্ধে আনা মানহানির আপিলের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে দেশটির আদালত।
শুক্রবার ফেডারেল কোর্ট বেন রবার্টস-স্মিথের করা এই আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলে, আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালনকালে নিরস্ত্র আফগান বন্দীদের হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে নিজেকে মুক্ত করার লড়াইয়ে নতুন করে ধাক্কা খেলেন তিনি।
আদালত ২০১৩ সালের একটি রায়ের বিরুদ্ধে করা রবার্টস-স্মিথের আপিল খারিজ করে দেয়, যেখানে বলা হয়েছিল ২০১৮ সালে প্রকাশিত কিছু সংবাদ প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে আনা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগগুলো মিথ্যা নয়।
বিচারক সেই সময় রায় দিয়েছিলেন, অভিযোগগুলো প্রমাণ করার মতো যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে এবং রবার্টস-স্মিথকে চারজন নিরস্ত্র আফগান নাগরিকের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা যেতে পারে।
আদালতের এই সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে বিচারপতি নাই পেরাম জানান, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে না।
এই দীর্ঘ এবং ব্যয়বহুল মামলার খরচ হয় প্রায় ২৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৮০ কোটি টাকার সমান।
এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্ভবত রবার্টস-স্মিথকেই দিতে হবে।
তবে, রবার্টস-স্মিথ জানিয়েছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার সুপ্রিম কোর্টে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন এবং নিজের সম্মান পুনরুদ্ধারের জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, “আমি এখনো আমার নির্দোষিতার প্রমাণ দিতে বদ্ধপরিকর এবং আমার বিরুদ্ধে আনা ঘৃণ্য অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা দ্রুতই অস্ট্রেলিয়ার সুপ্রিম কোর্টে এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করব।”
অন্যদিকে, যে সংবাদমাধ্যমগুলোতে রবার্টস-স্মিথের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো প্রকাশিত হয়েছিল, সেই ‘নাইন এন্টারটেইনমেন্ট’-এর নির্বাহী টোরি ম্যাগুইয়ার এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আজ অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন এবং এটি প্রমাণ করে যে অস্ট্রেলীয় জনগণের কাছে এর গুরুত্ব কতখানি।”
উল্লেখ্য, গত দুই দশকে অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো-র নেতৃত্বে পরিচালিত তালেবান এবং অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযানে অংশ নিতে ৩৯,০০০ সৈন্য আফগানিস্তানে প্রেরণ করেছিল।
সাবেক এসএএস কর্পোরাল রবার্টস-স্মিথ, যিনি আফগানিস্তানে ‘অসাধারণ বীরত্বের’ জন্য অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘ভিক্টোরিয়া ক্রস’ লাভ করেছিলেন।
২০২০ সালে প্রকাশিত একটি সরকারি প্রতিবেদনে জানা যায়, অস্ট্রেলীয় সেনারা আফগানিস্তানে ৩৯ জন আফগান বন্দী ও বেসামরিক নাগরিককে বেআইনিভাবে হত্যা করেছে।
ওই প্রতিবেদনে ১৯ জন বর্তমান ও প্রাক্তন সেনাসদস্যের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছিল।
তবে রবার্টস-স্মিথ তাদের মধ্যে ছিলেন কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
অস্ট্রেলিয়ান স্পেশাল ইনভেস্টিগেটর অফিসের সঙ্গে পুলিশ যৌথভাবে ২০০৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করা এসএএস এবং কমান্ডো রেজিমেন্টের সৈন্যদের বিরুদ্ধে মামলা তৈরির কাজ করছে।
২০১৮ সালে ‘দ্য এজ’, ‘দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ এবং ‘দ্য ক্যানবেরা টাইমস’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, রবার্টস-স্মিথ এক নিরস্ত্র আফগান বেসামরিক নাগরিককে একটি পাহাড় থেকে ফেলে দেন এবং তার অধীনস্থদের গুলি করার নির্দেশ দেন।
এছাড়াও, তার বিরুদ্ধে একটি কাঠের পা ওয়ালা ব্যক্তিকে মেশিনগান দিয়ে হত্যা করার অভিযোগও রয়েছে, যা পরে সেনাবাহিনীর একটি বারে পান করার পাত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা