অটিজম: বাড়ছে সচেতনতা, কিভাবে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ তৈরি করা যায়
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সারা বিশ্বে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে, এমন তথ্য বিভিন্ন গবেষণা ও পরিসংখ্যানে উঠে আসছে। এই বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগের পরিবর্তে, কিভাবে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ তৈরি করা যায়, যেখানে অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে, সেই বিষয়ে আলোকপাত করা প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ৩১ জন শিশুর মধ্যে ১ জনের অটিজম শনাক্ত হচ্ছে। এই সংখ্যাটা উদ্বেগের কারণ হতে পারে, তবে এর অন্য একটি দিকও রয়েছে। আসলে, অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং রোগ নির্ণয়ের উন্নতি হওয়ায় এমনটা হচ্ছে।
আগে যেখানে অটিজমকে একটি বিরল অবস্থা হিসেবে মনে করা হতো, বর্তমানে তা অনেক বেশি পরিচিতি লাভ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নব্বইয়ের দশকে ধারণা করা হতো প্রতি ৫০০ জনে ১ জন শিশু অটিজমে আক্রান্ত। কিন্তু ১৯৯৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১৫০ জনে ১ জন এই সমস্যায় ভুগছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, অটিজম নির্ণয়ের মানদণ্ডেও পরিবর্তন এসেছে।
আগে যেখানে রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়া বেশ কঠিন ছিল, বর্তমানে তা অনেক সহজ হয়েছে। ফলে, অনেক বেশি সংখ্যক মানুষের মধ্যে অটিজম শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে।
অটিজম মূলত একটি স্নায়ু-বিকাশজনিত অবস্থা, যা ব্যক্তির সামাজিকতা, যোগাযোগ এবং জগৎকে উপলব্ধি করার ধরনে প্রভাব ফেলে। তবে, এটি একেক জনের মধ্যে একেক রকমভাবে প্রকাশ পায়।
কারো কারো ক্ষেত্রে এটি সামান্য হতে পারে, আবার কারো জন্য গুরুতর সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে।
ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের মধ্যে অটিজম শনাক্তের হার তুলনামূলকভাবে কম দেখা যায়। আগে যেখানে প্রতি চারজন ছেলের বিপরীতে একজন মেয়ের অটিজম শনাক্ত হতো, বর্তমানে সেই অনুপাত কিছুটা কমেছে।
এর কারণ হলো, মেয়েদের মধ্যে অটিজমের লক্ষণগুলো অনেক সময় ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়, যা সনাক্ত করতে সমস্যা হয়। বর্তমানে, গবেষকরা এই বিষয়ে আরও সচেতন হচ্ছেন এবং মেয়ে শিশুদের অটিজম নির্ণয়ের হার বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অটিজম বেড়ে যাওয়া মানেই ভয়ের কিছু নেই। বরং, এটি একটি সুযোগ, যেখানে আমরা ভিন্নভাবে সক্ষম মানুষদের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে পারি। অনেক অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তি স্বাভাবিক জীবন যাপন করেন, পড়াশোনা করেন, খেলাধুলা করেন এবং কর্মজীবনেও সফল হন।
অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিদের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন – তারা সৃজনশীল এবং ভিন্ন ধারার চিন্তাভাবনা করতে পারেন। অনেকেই তাদের কর্মক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন এবং সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন। উদাহরণস্বরূপ, টেম্পল গ্র্যান্ডিন নামক একজন বিজ্ঞানী, যিনি পশুপালন নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং অটিজম নিয়ে বিভিন্ন লেখালেখি করেন, তার মতে, অটিজম তাকে পশুদের আচরণ বুঝতে সহায়তা করেছে।
বাংলাদেশেও অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, অটিজম আক্রান্ত শিশুদের সহায়তা করার জন্য কাজ করছে। তবে, আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে।
প্রয়োজন, পরিবার এবং সমাজের সমর্থন, বিদ্যালয়ে বিশেষ শিক্ষা ব্যবস্থা এবং কর্মক্ষেত্রে উপযুক্ত সুযোগ তৈরি করা।
অটিজম আক্রান্ত শিশুদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারলে, তারাও সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অবদান রাখতে পারবে। এর ফলে, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ে উঠবে, যেখানে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন