বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তা: বাংলাদেশের অভিভাবকদের জন্য একটি গাইড।
প্রতিটি বাবা-মায়ের কাছেই তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনের সুরক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর যদি সেই সন্তান বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হয়, তবে এই চিন্তা আরও গভীর হয়।
আমাদের সমাজে, বিশেষ করে বাংলাদেশে, শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন শিশুদের দেখাশোনা করার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রায়ই উপেক্ষিত হয়। অনেক পরিবারে, সন্তানের ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষার বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পায় না।
এর কারণ হতে পারে এই বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব অথবা সঠিক দিকনির্দেশনার অভাব।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য আর্থিক পরিকল্পনা করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, তারা সাধারণত অন্যদের মতো উপার্জন করতে পারে না এবং তাদের জীবনযাত্রার মান বজায় রাখতে সবসময় অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়।
তাদের চিকিৎসার খরচ, শিক্ষার খরচ, এবং ভবিষ্যতের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করা অভিভাবকদের প্রধান দায়িত্ব।
বাংলাদেশে, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদ বা সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা একটি জটিল বিষয়। বিশেষ করে, যদি কোনো ব্যক্তি মানসিক বা শারীরিক অক্ষমতার কারণে নিজের সম্পদ পরিচালনা করতে অক্ষম হন, তবে সেক্ষেত্রে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে।
উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অর্থ সরাসরি গ্রহণ করতে না পারলে, তা কিভাবে সুরক্ষিত করা যায়, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন।
এই ধরনের পরিস্থিতিতে, বিশেষ ট্রাস্ট বা অছি পরিষদের ধারণা গুরুত্বপূর্ণ। যদিও বাংলাদেশে সরাসরি ‘স্পেশাল নিডস ট্রাস্ট’-এর ধারণা প্রচলিত নয়, তবে অভিভাবকদের জন্য বিকল্প কিছু ব্যবস্থা রয়েছে, যা তাদের সন্তানের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে।
- উত্তরাধিকার পরিকল্পনা: আপনার সন্তানের জন্য একটি সুচিন্তিত উত্তরাধিকার পরিকল্পনা তৈরি করা উচিত, যেখানে তার প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পত্তির বিভাজন এবং ব্যবস্থাপনার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
- অভিভাবকত্ব: আপনার অবর্তমানে সন্তানের দেখাশোনার জন্য উপযুক্ত এবং বিশ্বস্ত একজন অভিভাবক নির্বাচন করা অপরিহার্য।
- আর্থিক উপদেষ্টা: একজন অভিজ্ঞ আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে, যিনি আপনার পরিবারের আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটি উপযুক্ত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তৈরি করতে সাহায্য করবেন।
এছাড়া, সরকারের পক্ষ থেকেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। এসব সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে অবগত থাকা এবং সেগুলোর সঠিক ব্যবহার করা প্রয়োজন।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে:
- আপনার সন্তানের প্রয়োজনগুলি চিহ্নিত করুন। তার স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার জন্য কি কি ধরনের সহায়তা প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করুন।
- একটি দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক পরিকল্পনা তৈরি করুন। এই পরিকল্পনায় চিকিৎসা খরচ, শিক্ষার খরচ, এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করুন।
- আইন ও নীতির বিষয়ে অবগত থাকুন। উত্তরাধিকার আইন এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানুন।
- পেশাদার সহায়তা নিন। একজন আইনজীবী এবং একজন আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ আপনার জন্য সহায়ক হতে পারে।
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে, অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে এবং সময় থাকতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।
কোনো দ্বিধা ছাড়াই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। মনে রাখতে হবে, আপনার সামান্য প্রচেষ্টা আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবনকে আরও সুন্দর এবং সুরক্ষিত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: The Guardian