গাড়ি তৈরির কারখানা কি সত্যিই আমেরিকায় সরবে? ট্রাম্পের দাবি নিয়ে ধোঁয়াশা!

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতির কারণে গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি এখনই তাদের উৎপাদন ব্যবস্থা আমেরিকায় স্থানান্তরের দিকে ঝুঁকছে না। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এই নীতি মূলত আমদানি করা গাড়ির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করবে, যা নতুন গাড়ির দাম কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।

এই শুল্কগুলি মূলত এশিয়া, ইউরোপ, কানাডা এবং মেক্সিকো থেকে আমদানি করা গাড়ির উপর আরোপ করা হবে। এর ফলে, অনেক গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা, যারা তাদের যন্ত্রাংশ এবং কিছু উৎপাদন প্রক্রিয়ার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলির উপর নির্ভরশীল, তারা ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই শুল্কের ফলে সংস্থাগুলি আমেরিকাতে নতুন কারখানা স্থাপন করতে উৎসাহিত হবে। কিন্তু বাস্তবে, বিষয়টি এত সহজ নয়। অটোমোবাইল শিল্পে বড় ধরনের বিনিয়োগের প্রয়োজন, যা সাধারণত কয়েক বছর সময় নেয়। এছাড়া, শুল্ক নীতির অনিশ্চয়তাও বিনিয়োগের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

ফোর্ড-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জিম ফার্লির মতে, এই শুল্ক নীতি সংস্থাগুলির জন্য ‘অনেক খরচ এবং বিশৃঙ্খলা’ ডেকে আনছে। জেনারেল মোটরস-এর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা পল জ্যাকবসন জানিয়েছেন, বাণিজ্য নীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তাদের অনেক প্রশ্ন রয়েছে, যার উত্তর এখনই পাওয়া যাচ্ছে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উৎপাদন ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে অনেক সময় লাগে। একটি নতুন কারখানা তৈরি করতে অথবা বিদ্যমান কারখানায় নতুন মডেলের গাড়ি তৈরি শুরু করতে কয়েক বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালে শ্রমিক ধর্মঘটের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি কারখানা পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ‘Stellantis’ নামক একটি সংস্থা।

কিন্তু সেই কারখানাটি ২০২৭ সালের আগে চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

এই শুল্ক নীতির ফলে গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং কাঁচামালের দামও বাড়তে পারে, যা আমেরিকার বাজারে গাড়ির দাম আরও বাড়িয়ে দেবে। মিশিগান-ভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থা ‘Anderson Economic Group’-এর মতে, এই শুল্কের কারণে প্রতিটি গাড়ির দাম প্রায় $3,500 (প্রায় চার লক্ষ বাংলাদেশী টাকা) থেকে $12,000 (প্রায় ১৩ লক্ষ বাংলাদেশী টাকা) পর্যন্ত বাড়তে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, যদিও ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে এই নীতি দীর্ঘমেয়াদে বহাল থাকুক, কিন্তু বাজারের অস্থিরতা এবং অনিশ্চয়তার কারণে গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি এখনই নতুন কারখানা তৈরি করতে আগ্রহী নয়।

এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি এবং শুল্কের প্রভাব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উন্নত দেশগুলির নেওয়া বাণিজ্য সিদ্ধান্তগুলি বিশ্ব অর্থনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলে, তা বিশেষভাবে লক্ষণীয়।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *