অস্কার-মনোনীত এবং এমি জয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক অ্যাভা ডুভার্নে ওয়াশিংটনে অবস্থিত স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ আমেরিকান হিস্টোরিতে একটি পুরস্কার গ্রহণকালে শিল্পী এবং ঐতিহাসিকদের প্রতি প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের “অপরাধমূলক” কার্যক্রমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
ডুভার্নে, যিনি ‘সেলমা’র মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন, যেখানে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের ভোটাধিকার আদায়ের সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, সেই তিনিই এমন সময় এই আহ্বান জানালেন, যখন “সত্যের পুনর্লিখনের” চেষ্টা চলছে।
ট্রাম্প সম্প্রতি একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যা স্মিথসোনিয়ান ইনস্টিটিউশন থেকে “অনুচিত, বিভেদ সৃষ্টিকারী, বা আমেরিকান-বিরোধী আদর্শ” দূর করতে চাইছে। এছাড়াও, ট্রাম্প জন এফ কেনেডি সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টস-এর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এবং লাইব্রেরি অফ কংগ্রেসের লাইব্রেরিয়ান কার্লা হেডেনকে বরখাস্ত করেছেন।
ডুভার্নেকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, ট্রাম্পের এই সংস্কৃতি ও শিল্পের ওপর আঘাত নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন কিনা, তখন তিনি বলেন, “অবশ্যই। তবে আমি বিস্মিত নই। যখন আপনি একজন অপরাধীকে নির্বাচিত করেন, তখন আপনি অপরাধ আশা করতে পারেন।”
উল্লেখযোগ্য, ট্রাম্প হলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রেসিডেন্ট, যিনি ২০১৬ সালে প্রাপ্তবয়স্ক চলচ্চিত্র অভিনেত্রী স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগসহ ব্যবসার হিসাব সংক্রান্ত বিষয়ে ৩৪টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।
স্মিথসোনিয়ান জাদুঘরে দেওয়া ভাষণে ডুভার্নে সরাসরি ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে, স্মিথসোনিয়ানের প্রতি সমর্থন জানান। তিনি এটিকে এমন একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্ণনা করেন যা “ইতিহাসের গুরুত্ব এবং তা ভালোভাবে বলার আকাঙ্ক্ষা” বোঝে।
৫২ বছর বয়সী এই চলচ্চিত্র নির্মাতার মতে, “ঐতিহাসিক সত্যকে এখন বিশেষভাবে জরুরি বলে মনে হচ্ছে, যখন ভয় যেন একটি চালিকা শক্তি।
আয়নার ভয়, স্মৃতির ভয়, জটিলতা এবং ধ্বংসাত্মক বৈপরীত্য সহকারে সম্পূর্ণ আমেরিকান গল্প বলার ভয়।”
তিনি আরও বলেন, “ইতিহাস কোনো অস্ত্র নয়, যা সুবিধামত সময়ে লুকিয়ে রাখা যায়। এটি ঘুমের জন্য শোনানো কোনো রূপকথাও নয়।
এটি একটি গভীর এবং অস্থির নদী, এবং স্মিথসোনিয়ান দীর্ঘদিন ধরে সেই সেতু হিসেবে কাজ করেছে, যা আমাদের সাবধানে পার হতে সাহায্য করে। আমরা জানি যে, যা কিছুকে কিছু ক্ষেত্রে ‘অনুচিত আদর্শ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তা আসলে সংযোগ স্থাপনকারী।
যা কিছুকে কেউ কেউ বিকৃত বলে, তা হয়তো একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, যা দীর্ঘদিন ধরে চাপা ছিল, কিন্তু এখন উন্মোচিত হয়েছে।”
ডুভার্নে এমন একটি সমাজের কথা উল্লেখ করেন যেখানে শিশুরা স্মিথসোনিয়ানের জাদুঘরে গিয়ে তাদের মা অথবা দিদিমার মতো দেখতে একজন নারীর ছবি দেখে, যিনি প্রতিবাদ করছেন অথবা প্রার্থনায় মগ্ন অথবা গর্বিত।
তিনি সেইসব শিক্ষকদের কথাও বলেন, যারা তাদের শিক্ষার্থীদের এখানে নিয়ে আসেন, কারণ তাদের পাঠ্যপুস্তকে রেডলাইনিং, তুলসা অথবা ইন্টার্নমেন্ট ক্যাম্প অথবা স্টোনওয়ালের কথা উল্লেখ নেই।
ডুভার্নে স্মিথসোনিয়ানের সেক্রেটারি লনি বাঞ্চের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যিনি আমেরিকার প্রতিষ্ঠাকালীন বৈপরীত্যের মোকাবিলা করেছেন এবং এর দুর্বলতাগুলো তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, “কারণ, এমন কোনো ইতিহাস নেই যা নিজেকে সম্মানিত করে, এমন কোনো স্মৃতি নেই যা কেবল কিছু মানুষের কথা মনে রাখে, এবং এমন কোনো ভবিষ্যৎ নেই যা বিস্মৃতিকে ধারণ করে।”
স্মিথসোনিয়ান মিউজিয়াম হলো বিশ্বের বৃহত্তম জাদুঘর, শিক্ষা এবং গবেষণা কেন্দ্র। ১৮৪৬ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
তবে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে যে, এই প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি “একটি বিভেদ সৃষ্টিকারী, জাতি-কেন্দ্রিক আদর্শের” প্রভাবে এসেছে এবং ভাইস- প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
ন্যাশনাল মিউজিয়াম অফ আমেরিকান হিস্টোরির পরিচালক আন্থেয়া হার্টিগ এক সাক্ষাৎকারে জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠান এখনো পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন হয়নি।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান