আতঙ্কের মুহূর্তেও বিমানের সুরক্ষা! হঠাৎ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হলে কী ঘটেছিল?

আকাশপথে যাত্রী নিরাপত্তা: ত্রুটিপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থার মাঝেও কিভাবে সুরক্ষিত থাকে বিমান চলাচল

বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। সামান্য ভুলের কারণেও ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যস্ততম বিমানবন্দর, নিউয়ার্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (Newark International Airport) রাডার (বিমান সনাক্তকরণ ব্যবস্থা) এবং কন্ট্রোল টাওয়ারের মধ্যে যোগাযোগের সমস্যা দেখা দেয়। এর ফলে কিছু সময়ের জন্য বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণে সমস্যা সৃষ্টি হয়।

তবে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ায় বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।

এই ঘটনাটি বিমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার গুরুত্ব নতুন করে সামনে এনেছে। সাধারণত, বিমানবন্দরের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা (বিমান ট্রাফিক নিয়ন্ত্রক) বিমানের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাদের দিকনির্দেশনা দেন।

বিমানের নিরাপদ উড্ডয়ন ও অবতরণ নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিউইয়র্কের ঘটনায়, যখন কন্ট্রোলারদের সাথে বিমানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন অন্যান্য বিকল্প ব্যবস্থা দ্রুত কাজে লাগানো হয়।

বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা শুধু একটি স্তরের উপর নির্ভরশীল নয়। এখানে একাধিক নিরাপত্তা স্তর থাকে।

কন্ট্রোল টাওয়ারের রাডার ব্যবস্থা বিকল হয়ে গেলে, ব্যাকআপ হিসেবে অন্যান্য রাডার স্টেশনগুলি তাৎক্ষণিকভাবে কাজ শুরু করে।

এছাড়াও, পাইলটদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং জরুরি অবস্থার জন্য আলাদা যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। বিমানগুলোতে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা অন্য বিমানের অবস্থান সম্পর্কে পাইলটকে সতর্ক করে এবং সংঘর্ষ এড়াতে সাহায্য করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Federal Aviation Administration – FAA) জানিয়েছে, যোগাযোগে সমস্যা হলেও বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়।

এর মধ্যে রয়েছে বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা, যেমন ডেটা লিঙ্ক সিস্টেমের মাধ্যমে টেক্সট মেসেজ পাঠানো অথবা জরুরি রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা। এছাড়া, পাইলটদের প্রশিক্ষণেও গুরুত্ব দেওয়া হয়, যেখানে তারা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে কি করতে হবে, সেই বিষয়ে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ পান।

এ প্রসঙ্গে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একজন পাইলট, যিনি প্রায় ১৮,০০০ ঘণ্টা বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, জানান, “যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া একটি বিরল ঘটনা, তবে আমরা এর জন্য প্রস্তুত থাকি।

আমাদের প্রশিক্ষণে এই ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।”

যদিও এই ঘটনাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের, তবে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতেও যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

দেশের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল এবং বিমান সংস্থাগুলোও তাদের নিরাপত্তা প্রোটোকল এবং ব্যাকআপ সিস্টেমের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়।

বিমানযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিতভাবে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমান চলাচলে প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা যোগাযোগের সমস্যা একটি উদ্বেগের বিষয়, তবে এর সমাধানে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উন্নত প্রযুক্তি, প্রশিক্ষিত কর্মী এবং সমন্বিত পরিকল্পনা অত্যন্ত জরুরি।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *