পুরুষদের মানসিক চাপ এবং তা থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে নতুন একটি নিবন্ধ।
বর্তমান সময়ে, বাবারাও যে মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হন, সেই বিষয়ে অনেকেই হয়তো অবগত নন। আধুনিক জীবনযাত্রায় একদিকে যেমন বেড়েছে দায়িত্ব, তেমনি বেড়েছে মানসিক চাপ।
সন্তানের পড়াশোনা থেকে শুরু করে পরিবারের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা—সবকিছু নিয়ে চিন্তা করতে করতে অনেক সময় পুরুষরা দিশেহারা হয়ে পড়েন। অতিরিক্ত উদ্বেগের কারণে তাদের মধ্যে ধৈর্য কমে আসে, যা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের কারণ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের একজন মনোবিজ্ঞানী, ড. জেট স্টোন, পুরুষদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করেন। তিনি মনে করেন, পুরুষদের মনের ভেতরের কথাগুলো প্রকাশ করার সুযোগ কম থাকে।
অনেক সময় তারা নিজেদের অনুভূতিগুলো চেপে রাখেন, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এই মানসিক চাপ কমাতে এবং জীবনের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
প্রথমেই, নিজের উদ্বেগের কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। অনেক সময় অফিসের কাজ, আর্থিক দুশ্চিন্তা অথবা পরিবারের অন্য কোনো সমস্যা—এগুলো আমাদের উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
নিজের উদ্বেগের কারণগুলো খুঁজে বের করে তা লিখে রাখলে, পরবর্তীতে তা মোকাবেলা করা সহজ হয়।
দ্বিতীয়ত, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা যেতে পারে। ড. স্টোন ‘সাইক্লিক সাই’ নামক একটি বিশেষ শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের কথা উল্লেখ করেছেন।
এই পদ্ধতিতে প্রথমে গভীরভাবে দুটি শ্বাস নিতে হবে, এরপর ধীরে ধীরে শ্বাস ত্যাগ করতে হবে। এটি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
তৃতীয় কৌশলটি হলো ‘থট ম্যাপিং’। অর্থাৎ, আপনার চিন্তাগুলোকে একটি নির্দিষ্ট পথে সাজানো। যখন কোনো চিন্তা আপনাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে, তখন সেই চিন্তার সূত্রপাত কোথায়, সেটি চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন।
যেমন, অফিসের বসের কথা মনে করে যদি আপনার খারাপ লাগে, তবে সেই খারাপ লাগা থেকে আপনি কীভাবে আরও বেশি উপার্জন করতে পারেন, সেই সম্পর্কে চিন্তা করতে শুরু করতে পারেন। এভাবে নিজের চিন্তাগুলোকে একটি কাঠামোর মধ্যে আনলে, আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোন বিষয়গুলো আপনাকে বেশি উদ্বিগ্ন করে।
চতুর্থত, জীবনে কিছু গভীর আকাঙ্ক্ষা বা ‘ডিপার ড্রাইভস’ খুঁজে বের করা প্রয়োজন। মনোবিজ্ঞানী স্টিভেন হেয়েসের মতে, মানুষের কিছু মৌলিক চাহিদা রয়েছে, যেমন—অন্যের সঙ্গে মিশতে চাওয়া, সমাজে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া, এবং নিজের কাজে দক্ষতা অর্জন করা।
যখন এই চাহিদাগুলো অপূর্ণ থাকে, তখন মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। নিজের ভেতরের এই গভীর আকাঙ্ক্ষাগুলো চিহ্নিত করতে পারলে, জীবনের প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি আরও ইতিবাচক হবে।
পঞ্চমত, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভ্যাস করুন। যারা আপনার জীবনে ভালো কিছু এনেছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকুন।
বন্ধুদের ধন্যবাদ জানান, বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলুন, অথবা আপনার সঙ্গীকে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ দিন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে আপনার মন আরও শান্ত হবে এবং আপনি জীবনের সুন্দর দিকগুলো অনুভব করতে পারবেন।
সবশেষে, রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন। রাগের কারণগুলো বোঝার চেষ্টা করুন। অনেক সময় রাগের পেছনে ভয় বা হতাশা কাজ করে।
রেগে গেলে নিজেকে শান্ত করার জন্য কিছুক্ষণ বিরতি নিন এবং গভীরভাবে শ্বাস নিন। আপনি কেন রেগে গিয়েছেন, সেই বিষয়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন। এতে রাগ নিয়ন্ত্রণে আনা সহজ হবে।
ড. স্টোন আরও বলেন, একজন পুরুষ সবসময় একটি সত্তা নয়, বরং অনেকগুলো সত্তার সমষ্টি। তাই নিজের ভেতরের ভালো এবং খারাপ দিকগুলো মেনে নিয়ে, জীবনকে আরও সুন্দরভাবে উপভোগ করা সম্ভব।
তথ্য সূত্র: সিএনএন