বাবা, আপনার মানসিক স্বাস্থ্য সন্তানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে: নতুন গবেষণা
—————————————————————————-
সন্তানের সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য মায়েরাই প্রধান ভূমিকা পালন করেন—এমন ধারণা প্রচলিত থাকলেও, নতুন একটি গবেষণায় বাবারাও যে এক্ষেত্রে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ, সেই তথ্য উঠে এসেছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এই গবেষণায় জানা গেছে, বাবার মানসিক স্বাস্থ্য সন্তানের শারীরিক, মানসিক এবং জ্ঞানীয় বিকাশে প্রভাব ফেলে।
গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে এবং এতে দেখা গেছে, বাবারা যদি মানসিক অবসাদে ভোগেন, তাহলে শিশুদের বিকাশে কিছুটা হলেও ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
মানসিক অবসাদ বলতে এখানে বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, মানসিক চাপ—এসব বিষয়কে বোঝানো হয়েছে।
গর্ভাবস্থা থেকে শুরু করে প্রসবের পরবর্তী দুই বছর পর্যন্ত সময়ে, অর্থাৎ শিশুদের শৈশবে বাবার মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন ইউনিভার্সিটির ‘সিড লাইফস্প্যান রিসার্চ সেন্টার’-এর অধ্যাপক এবং এই গবেষণার প্রধান লেখক ড. ডেলিসা হাচিনসন বলেন, “বাবাদের মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে শিশুদের বিকাশের সম্পর্ক নিয়ে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিস্তারিত গবেষণা।
গবেষণার ফলাফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল—বিভিন্ন ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে শিশুদের বিকাশের ধরনে মিল খুঁজে পাওয়া গেছে।”
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, যেসব বাবারা সন্তান জন্মগ্রহণের পর মানসিক উদ্বেগে ভোগেন, তাদের ক্ষেত্রে শিশুদের সামাজিক এবং আবেগিক বিকাশ, ভাষার বিকাশ এবং শারীরিক স্বাস্থ্যে সমস্যা হতে পারে।
এমনকি শিশুদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ কমে যাওয়া, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া এবং মনোযোগের অভাব দেখা দিতে পারে।
গবেষকরা ৮৪টি গবেষণা বিশ্লেষণ করেছেন, যেখানে বাবা ও শিশুদের ওপর নজর রাখা হয়েছিল।
এসব গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মানসিক স্বাস্থ্য গর্ভাবস্থা থেকে শুরু করে শিশুর জন্মের দুই বছর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।
গবেষণায় মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সন্তানের বিকাশের সম্পর্ক নির্ণয় করার জন্য সামাজিক-আবেগিক, অভিযোজন ক্ষমতা, জ্ঞানীয়, ভাষা, শারীরিক এবং মোটর দক্ষতা সহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, গবেষণায় আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে।
সেটি হলো, জন্ম-পরবর্তী মানসিক চাপ, জন্ম-পূর্ববর্তী মানসিক চাপের চেয়ে শিশুদের ওপর বেশি প্রভাব ফেলে।
তার মানে, বাবারা সন্তানের জন্মের পর যে মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যান, সেটি সন্তানের বিকাশে আরও সরাসরি প্রভাব ফেলে।
এই গবেষণার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে, ইউনিভার্সিটি অফ নেব্রাস্কা মেডিকেল সেন্টারের অধ্যাপক ড. আরওয়া নাসির বলেন, “শিশুদের জীবনে বাবার ভূমিকা নিয়ে গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভবিষ্যতে, বাবারা কীভাবে শিশুদের স্বাস্থ্য এবং বিকাশে আরও বেশি সহায়তা করতে পারেন, সে বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা করা উচিত।
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যা সমাধানে বাবারা যাতে দ্রুত সহায়তা পান, সেদিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
মনোবিদ এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
বাবারা যেন তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে পারেন এবং প্রয়োজনে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা যায়, সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
ড. হাচিনসন বলেন, “বাবা হওয়াটা অনেক সময় কঠিন হতে পারে, এবং এই সময়ে অনেকেরই মানসিক উত্থান-পতন হয়।
তাই, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো সমস্যা হলে দ্রুত সাহায্য নেওয়াটা দুর্বলতা নয়, বরং এটি একটি সাহসিক পদক্ষেপ।”
বাবা এবং পরিবারের সুস্থ জীবন নিশ্চিত করতে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
একটি সুস্থ পরিবারই পারে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ সমাজ গড়তে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন