আশ্চর্য পরিবার: বন্যপ্রাণীর জগতে মা ও শিশুদের বন্ধন
মা ও শিশুর সম্পর্ক, স্নেহ আর ভালোবাসার এক অসাধারণ চিত্র সবসময়ই আমাদের মুগ্ধ করে। মানুষের পরিবারে যেমন ভালোবাসার বন্ধন থাকে, তেমনই বন্যপ্রাণীর জগতেও রয়েছে পরিবারের গুরুত্ব।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি প্রতিবেদনে বন্যপ্রাণীদের পরিবার এবং তাদের সন্তানদের প্রতিপালনের কিছু মনোমুগ্ধকর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আসুন, সেই জগৎটা একটু ঘুরে আসা যাক।
পরিবার: ভালোবাসার আশ্রয়
পরিবার হল ভালোবাসার আশ্রয়স্থল। পাখির দল থেকে শুরু করে স্তন্যপায়ী প্রাণী— সবার জীবনেই পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা তাদের সন্তানদের খাদ্য, নিরাপত্তা এবং সঠিক জীবন ধারণের কৌশল শিখিয়ে থাকে।
কোনো প্রাণী হয়তো একা ওড়ার জন্য জন্মায়, আবার কোনো প্রাণী মায়ের সঙ্গেই বছরের পর বছর কাটায়। এই ভালোবাসার বন্ধন তাদের টিকে থাকতে সাহায্য করে।
পুরুষ পাখির মাতৃত্ব: এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য
সাধারণত, আমরা মায়েদেরই দেখি শিশুদের প্রতিপালন করতে। কিন্তু প্রকৃতিতে এমন কিছু প্রাণী আছে, যেখানে বাবারাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে। যেমন, দক্ষিণ আমেরিকার বৃহৎ উড্ডয়নক্ষম পাখি ডারউইন’স রিয়া (Darwin’s rhea)।
এরা দেখতে অনেকটা উটের মতো। এই পাখির পুরুষ সদস্যরা একাই ৩০টি পর্যন্ত ডিমের তা দেয় এবং বাচ্চা বড় না হওয়া পর্যন্ত তাদের দেখাশোনা করে।
তাদের শিকারীর হাত থেকে বাঁচানো থেকে শুরু করে, জীবনের প্রতিটি পাঠ শেখানোর দায়িত্ব পালন করে বাবারাই।
বিপদের মুখে সন্তানের নিরাপত্তা
সন্তানদের ভালোবাসায় কোনো কমতি নেই মায়েদের। বিপদ দেখলে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের বাঁচাতে।
যেমন, উত্তর মেরুর তৃণভূমি অঞ্চলে বসবাসকারী মাস্ক অক্স (muskox) নামক প্রাণীগুলো যখন কোনো নেকড়ে বা ভালুকের আক্রমণের শিকার হয়, তখন তারা তাদের বাচ্চাদের রক্ষার জন্য একত্রিত হয়।
শক্তিশালী পুরুষ মাস্ক অক্সগুলো নিজেদের ধারালো শিং দিয়ে আক্রমণকারীদের প্রতিরোধের চেষ্টা করে, আর তাদের বাচ্চারা ভেতরের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়।
অন্যান্য প্রাণীদের সহযোগিতা
কিছু কিছু ক্ষেত্রে, পরিবারের অন্য সদস্যরাও শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্ব নেয়। এই ধরনের সহযোগিতামূলক আচরণকে ‘অ্যালোপ্যারেন্টিং’ বলা হয়।
অনেক পেঙ্গুইন প্রজাতি একসঙ্গে বাচ্চাদের দেখাশোনার জন্য একটি স্থান তৈরি করে, যেখানে বাবা-মা দুজনেই খাবার আনতে যাওয়ার সময় তাদের বাচ্চাদের রেখে যায়। এছাড়া, ক্লাউডেড লেপার্ডের মতো কিছু প্রাণী একা একাই তাদের বাচ্চাদের বড় করে তোলে।
কোমোডো ড্রাগন: এক ভিন্ন জগৎ
কোমোডো ড্রাগন (Komodo dragon) নামক সরীসৃপ প্রজাতি তাদের বাচ্চাদের থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য এক ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। জন্মের পর তারা তাদের বাবা-মায়ের থেকে দূরে গাছের উপরে আশ্রয় নেয়, কারণ তাদের বাবা-মায়েরা তাদের খেয়ে ফেলতে পারে!
পরিবারের বন্ধন: টিকে থাকার চাবিকাঠি
বাবা-মা, ভাইবোন, এমনকি পরিবারের বাইরের সদস্যরাও— সবাই মিলেমিশে শিশুদের ভালোভাবে বাঁচতে সাহায্য করে। হাঁসের ছানা থেকে শুরু করে অরণ্যের ওরাংওটাং— সবার জীবনেই পরিবারের বন্ধন তাদের টিকে থাকার চাবিকাঠি।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক