ছোট্ট শিশুর জন্য ৫০০০ ডলার বোনাস! আসল সত্যিটা জানলে চমকে যাবেন!

বিশ্বজুড়ে জন্মহার হ্রাস একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে, আর এই পরিস্থিতিতে অনেক দেশেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সম্প্রতি, আমেরিকাতেও শিশুদের জন্ম উৎসাহিত করতে ‘বেবি বোনাস’-এর মতো আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব উঠেছে, যা এরই মধ্যে আলোচনায় এসেছে।

তবে এই ধরনের পদক্ষেপ কতটা কার্যকর, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন বাবা-মায়েদের জন্য ৫,০০০ ডলারের ‘বেবি বোনাস’-এর ধারণা নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। যদিও দেশটির ফার্টিলিটি রেট বা জন্মহার এরই মধ্যে রেকর্ড পরিমাণে কমে এসেছে।

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সন্তান ধারণের বিষয়ে নতুন করে ভাবনা-চিন্তা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু শুধু আর্থিক সাহায্যই কি এই সমস্যার সমাধান? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টা এত সহজ নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং পরিবার পরিকল্পনা করার স্বাধীনতা- এই বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

উন্নত বিশ্বে নারীদের মধ্যে শিক্ষা ও কর্মজীবনের প্রসারের ফলে পরিবার পরিকল্পনার ধারণা আরও শক্তিশালী হয়েছে, যা জন্মহার হ্রাসের একটি কারণ।

কিছু দেশ, যেমন পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি এবং জার্মানি, জনসংখ্যা বাড়াতে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিয়ে থাকে।

হাঙ্গেরি নববিবাহিত দম্পতিদের জন্য সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করে, যা তিনটি সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে পরিশোধ করতে হয় না। হংকং-এ প্রতিটি সন্তানের জন্য আড়াই হাজার ডলার পর্যন্ত দেওয়ার নিয়ম রয়েছে।

জার্মানির সরকার শিশুদের জন্য মাসিক ভাতা (kindergeld) প্রদান করে, সেইসঙ্গে নতুন বাবা-মায়েদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা ও কর ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

তবে, এই ধরনের পদক্ষেপ সব সময় সফল নাও হতে পারে।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, জন্মহার কমানোর পেছনে সমাজের আরও অনেক গভীর কারণ রয়েছে। নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, এবং উন্নত জীবনযাত্রার সুযোগ—এগুলো তাদের জীবনকে নতুনভাবে সাজাতে সাহায্য করেছে।

তাই কেবল আর্থিক প্রণোদনা দিয়ে এই প্রবণতা পুরোপুরি পরিবর্তন করা কঠিন।

যুক্তরাষ্ট্রেও শিশুদের জন্য ট্যাক্স ক্রেডিট-এর মতো কিছু ব্যবস্থা চালু আছে, যা শিশুদের দেখাশোনার খরচ কমাতে সাহায্য করে।

তবে এই ধরনের পদক্ষেপগুলো রাজনৈতিক বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়।

জন্মহার কমার কারণে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ার মতো সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। এর ফলে সামাজিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় চাপ সৃষ্টি হয়।

তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি দেখি, তাহলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

এখানেও নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে উন্নত বিশ্বের জনসংখ্যা নীতি এবং প্রণোদনাগুলো আমাদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে।

বর্তমানে, জন্মহার কমার প্রবণতা বিশ্বজুড়ে একটি জটিল সমস্যা, যার সমাধানে প্রয়োজন সুচিন্তিত নীতি এবং সমন্বিত পদক্ষেপ।

শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, বরং সমাজে নারীদের অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার মাধ্যমে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনা যেতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *