রিচার্ড গ্যাড: খ্যাতি, মানসিক চাপ আর অপ্রত্যাশিত সাফল্যের অন্য এক গল্প।
গত এক বছরে, স্কটিশ কমেডিয়ান রিচার্ড গ্যাড যেন রাতারাতি বিশ্বজুড়ে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। এর কারণ, নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া তাঁর আত্মজীবনীমূলক মিনি-সিরিজ ‘বেবি রেইনডিয়ার’-এর আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা।
এতে তিনি নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন, যেখানে তিনি একজন নারীর দ্বারা ‘স্টকিং’ এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এপ্রিল মাসে মুক্তি পাওয়ার পর, নেটফ্লিক্সের সবচেয়ে বেশিবার দেখা ১০টি অনুষ্ঠানের মধ্যে এটি জায়গা করে নিয়েছে।
শুধু তাই নয়, অনুষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ছয়টি এমি অ্যাওয়ার্ড, চারটি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার এবং ছয়টি বাফটা (BAFTA) মনোনয়নও পেয়েছে।
তবে, সাফল্যের এই শিখরে আরোহণের পথে বিতর্কও কম হয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে খুঁজে বের করেছেন, গ্যাডের ‘স্টকার’-এর চরিত্রে অভিনয় করা নারী আসলে কে ছিলেন।
জানা গেছে, সেই নারী, ফিওনা হার্ভে, নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে ১৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মানহানির মামলা করেছেন।
৩৫ বছর বয়সী গ্যাড বর্তমানে বিবিসি-র নতুন একটি অনুষ্ঠানে কাজ করছেন, যার নাম ‘হাফ ম্যান’, যেখানে তাঁর সহ-অভিনেতা হিসেবে রয়েছেন জেমি বেল। সম্প্রতি লন্ডনের একটি হোটেলে তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময় মনে হচ্ছিল, গ্যাড যেন এখনো আগের জীবনের ধাক্কা সামলে উঠতে পারেননি।
যেন গত এক বছরের ঝড়ে সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেছে তাঁর।
বাফটা-র জন্য ছয়টি মনোনয়ন পাওয়ার অনুভূতি কেমন ছিল? গ্যাড মৃদু হেসে বলেছিলেন, “এটা ছিল অপ্রত্যাশিত এক আনন্দ। ‘বেবি রেইনডিয়ার’ মুক্তি পাওয়ার পর বেশ কয়েক মাস কেটে গেছে।
তাই আমার ভয় ছিল, সবাই হয়তো এটা ভুলেই গেছে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, অনুষ্ঠানটি যে এত জনপ্রিয়তা পাবে, তা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। কারণ, এর মধ্যে বাণিজ্যিক সাফল্যের কোনো উপাদান ছিল না।”
‘বেবি রেইনডিয়ার’-এর মুক্তির পর তাঁর জীবনে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে, জানতে চাইলে গ্যাড বলেন, “বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠানটি মুক্তি পায়, আর রবিবারই দেখি, আমার বাড়ির দরজায় অটোগ্রাফের জন্য মানুষের ভিড়। আমি তো ছিলাম একজন ‘আর্টহাউস’ কমেডিয়ান, যিনি রাতে পাঁচজনের সামনে অভিনয় করতেন।
তাই, এই পরিবর্তনটা আমার জন্য ছিল বিশাল বড় একটা ধাক্কা। এখনো আমি সবকিছু মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। এখন বাজারে গেলেও অনেক কিছু মাথায় রাখতে হয়।”
গ্যাডের ভাষায়, ‘বেবি রেইনডিয়ার’-এর মূল বিষয় ছিল খ্যাতি অর্জনের চেষ্টা। তিনি যেন সেই খ্যাতি পেয়েছেন। তাহলে, তাঁর প্রত্যাশা আর বাস্তবতার মধ্যে মিল কতটা? গ্যাড বলেন, “আশ্চর্যজনকভাবে, আমি কখনোই খ্যাতি চাইনি।
আমি চেয়েছিলাম এমন একটি শিল্পকর্ম তৈরি করতে, যা সাংস্কৃতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হবে। হয়তো, তাহলে আমি নিজেকে ভালোবাসতে পারতাম। খ্যাতির সঙ্গে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি আসে, সেটা হলো জনসমক্ষে এক ধরনের paranoiac অবস্থা।”
বিষয়টা অনেকটা ‘স্টকিং’-এর শিকার হওয়ার মতো, তাই না? গ্যাড স্বীকার করেন, “এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা একেবারে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান।
ধরুন, আপনি কোথাও খেতে গিয়েছেন, এমন সময় কেউ এসে আপনার পাশে চেয়ার টেনে বসলো। বিষয়টা খুবই অস্বস্তিকর।”
২০১৬ সালে যখন তিনি এডিনবার্গ ফ্রিন্জ শো করেছিলেন, যার ওপর ভিত্তি করে ‘বেবি রেইনডিয়ার’-এর চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছে, তখন যৌন নির্যাতনের বিষয়ে আলোচনা এতটা সহজ ছিল না। এখন কি পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হয়েছে?
গ্যাড বলেন, “তখন #MeToo আন্দোলন শুরু হয়নি। বিশেষ করে, কমেডি জগতে এবং একজন পুরুষের দ্বারা যৌন নির্যাতনের কথা বলাটা বেশ কঠিন ছিল। মনে হতো, এটা সামাজিক আত্মহত্যার শামিল। আমি ভেবেছিলাম, সবাই আমাকে একঘরে করে দেবে।
এখন আমরা বুঝতে পেরেছি, এই ধরনের ঘটনা কতটা সাধারণ। লজ্জাটা ধীরে ধীরে কমছে।”
গত বছর ফিওনা হার্ভে নেটফ্লিক্সের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এই পরিস্থিতিতে তিনি কেমন অনুভব করছেন? গ্যাড বলেন, “অনেক কঠিন মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে।
শো-টা এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে, কিছু সময় মনে হয়েছে, চাপটা অসহনীয়। এটা যেন একটা ঘূর্ণিঝড়। এখনো আমি সেই পর্যায়ে পৌঁছাইনি, যেখানে বসে সবকিছু নিয়ে চিন্তা করতে পারি।
আমার মনে হয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমার কিছুটা সময় লাগবে। কারণ, আমি এখন বেশ চাপে আছি।”
স্ট্যান্ড-আপ কমেডি থেকে কি আবার ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা আছে? গ্যাড বলেন, “আমি অনেক প্রস্তাব পাচ্ছি, তবে আমার মনে হয়, স্ট্যান্ড-আপের দিন শেষ। আমি আসলে এখানে মানিয়ে নিতে পারিনি।
আমি যে ধরনের স্ট্যান্ড-আপ করতাম, তা ছিল খুবই ভিন্ন এবং কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন। সাধারণত, কেউ আমাকে বুক করত না, কারণ আমি ছিলাম একটা ঝুঁকির মতো। তাই, আমার জন্য এখানে কোনো ভবিষ্যৎ ছিল না।”
এ বছর তিনি কোন টিভি শো-টি বেশি উপভোগ করেছেন? গ্যাড জানান, “আমি যখন কোনো টিভি শো-এর কাজ করি, তখন টিভি দেখি না।
কারণ, এটা আমার লেখাকে প্রভাবিত করে। তবে, ‘হেল’স কিচেন’ দেখলে আমার ভালো লাগে। গর্ডন রামসে-কে (Gordon Ramsay) যখন দেখি, তিনি লোকজনের ওপর চিৎকার করছেন, তখন আমার ঘুম আসার আগে বেশ শান্তি লাগে।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান