মা, চারু আমাকে আজ মোটা বলেছে! – শিশুদের শরীর নিয়ে উদ্বেগের বিষয়ে কথা বলা।
ছোট্ট সোনামণির মুখে এমন কথা শুনে কোন মা-বাবার মন খারাপ হবে না বলুন? চারপাশে সৌন্দর্যের মাপকাঠি তৈরি হয়েছে, যেখানে শরীরের গঠন নিয়ে শিশুদের মনেও তৈরি হচ্ছে নানা প্রশ্ন।
ছেলে হোক বা মেয়ে, সবার মনেই একটা ধারণা গেঁথে যায়, সুন্দর দেখতে না হলে বুঝি সমাজে গুরুত্ব পাওয়া যায় না। আসুন, শিশুদের সাথে কীভাবে এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা যায়, তা নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।
শিশুদের মনে রাখা দরকার, সবার শরীর আলাদা। তাই কেউ যদি তাদের শরীরের গঠন নিয়ে খারাপ কথা বলে, তাহলে প্রথমে তাদের অনুভূতিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
তাদের কথা মন দিয়ে শুনুন। “আচ্ছা, চারু তোমাকে এমন কথা বলার কারণ কী হতে পারে?” – এমন প্রশ্ন করে তাদের ভাবনাগুলো জানতে চেষ্টা করুন।
এরপর তাদের বোঝান, সবার শরীর একই রকম হয় না। কেউ হয়তো একটু লম্বা, কেউ খাটো; কেউ হয়তো একটু বেশি ওজনের, আবার কেউ কম।
শরীরের গঠন নিয়ে খারাপ কথা বলাটা ঠিক নয়, বরং এটি অন্যের অনুভূতিতে আঘাত করে। তাদের শেখান, বাইরের সৌন্দর্য নয়, ভেতরের ভালো গুণগুলোই আসল।
দয়া, সহানুভূতি, অন্যের প্রতি সম্মান—এগুলোই মানুষকে সুন্দর করে তোলে।
বর্তমান যুগে সামাজিক মাধ্যম এবং টেলিভিশনের প্রভাব অনেক বেশি। শিশুরা তাদের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের সৌন্দর্য দেখে অভ্যস্ত হয়।
সেখানে তাদের পছন্দের তারকারা হয়তো বিশেষ শারীরিক গঠন নিয়ে পরিচিত। তাই, তাদের মনে হতে পারে, তাদের শরীর সেই আদর্শের মতো নয়।
এক্ষেত্রে তাদের বোঝানো দরকার, প্রতিটি মানুষের সৌন্দর্য আলাদা। শরীরের গঠন ছাড়াও আরও অনেক কিছু রয়েছে যা একজন মানুষকে আকর্ষণীয় করে তোলে।
অনেক সময় দেখা যায়, শিশুরা অন্যদের দেখে মেকআপ বা অন্যান্য প্রসাধনী ব্যবহারের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এক্ষেত্রে তাদের কৌতূহলকে উৎসাহিত করুন।
তাদের সাথে কথা বলুন এবং বুঝিয়ে বলুন, এসব জিনিস ব্যবহারের আসল উদ্দেশ্য কী। তাদের ত্বকের যত্ন নেওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে জানান।
ত্বক পরিষ্কার রাখা, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা—এগুলো তাদের ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ছেলেদের ক্ষেত্রে, পেশীবহুল শরীর তৈরির প্রবণতা দেখা যায়। এক্ষেত্রে তাদের শরীরের যত্ন নেওয়ার গুরুত্ব বোঝান, কিন্তু সেই সাথে অতিরিক্ত প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট বা জিমে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করুন।
তাদের জানান, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমেও তারা শক্তিশালী হতে পারে।
খাবার নিয়ে কথা বলার সময়, “ভালো” বা “খারাপ” – এমন শব্দ ব্যবহার করা উচিত নয়। বরং সব ধরনের খাবার সম্পর্কে নিরপেক্ষ ধারণা দিন।
তাদের পছন্দের খাবারগুলো খেতে দিন, তবে পরিমিত পরিমাণে। খাবারের বিষয়ে সঠিক ধারণা তৈরি করতে পারলে, তারা নিজেরাই বুঝতে পারবে তাদের শরীরের জন্য কোনটা ভালো।
শিশুদের আত্ম-মর্যাদাবোধ তৈরি করতে বাবা-মায়েরাই পারেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে। তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন, তাদের অনুভূতিকে সম্মান করুন এবং তাদের ভেতরের সৌন্দর্যকে ভালোবাসতে শেখান।
মনে রাখবেন, আত্ম-সচেতনতা তৈরি হওয়ার শুরুটা হয় পরিবার থেকেই।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান