নারীর বন্ধুত্ব: এক নতুন উপলব্ধির সন্ধানে—টিফানি ওয়াট স্মিথের “ব্যাড ফ্রেন্ড”
নারীর বন্ধুত্ব—এ এক আশ্চর্য সম্পর্ক। ভালো বন্ধু পাওয়া যেন এক অমূল্য রত্ন, আবার এই বন্ধুত্বে চিড় ধরলে তা বয়ে আনে গভীর কষ্ট। সম্পর্কের এই জটিলতা নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে টিফানি ওয়াট স্মিথের নতুন বই, “ব্যাড ফ্রেন্ড: এ সেঞ্চুরি অফ রেভোলিউশনারি ফ্রেন্ডশিপস”। বইটি নারীত্বের এক ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বন্ধুত্বের সম্পর্কের নানা দিক তুলে ধরেছে।
সাধারণত, আমরা বন্ধুত্বের সংজ্ঞা দিই—এক অবিচ্ছেদ্য, সবসময় পাশে থাকা সম্পর্কের যা ভালো সময়ে উৎসাহ যোগায়, খারাপ সময়ে দেয় ভরসা। কিন্তু বাস্তবে, এই সম্পর্কের পথ সব সময় মসৃণ থাকে না। ঈর্ষা, প্রতিযোগিতা, এমনকি মনোমালিন্য—এগুলোও বন্ধুত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠতে পারে।
টিফানি ওয়াট স্মিথ তাঁর বইয়ে এই দিকগুলোকেই তুলে ধরেছেন, যা আমাদের সমাজের প্রচলিত ধারণার সঙ্গে অনেক সময় মেলে না। লেখিকা দেখিয়েছেন, কীভাবে আমরা বন্ধুত্বের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক বেশি প্রত্যাশা করি, যা পূরণ না হলে হতাশা তৈরি হয়।
বইটিতে লেখক বিশ শতকের নারীদের বন্ধুত্বের ইতিহাস অনুসন্ধান করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে নারীরা একে অপরের প্রতি সমর্থন জুগিয়েছেন, আবার কখনো তাঁদের মধ্যে তৈরি হয়েছে জটিলতা।
এই বইয়ে, লেখক তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করেছেন, বিশেষ করে তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু সোফিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে আলোচনা করেছেন। সোফিয়ার বিয়ে এবং মাতৃত্বের সময় ওয়াট স্মিথ নিজেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন, যা তাঁর মধ্যে এক ধরনের ঈর্ষা তৈরি করেছিল।
ওয়াট স্মিথ তাঁর বইয়ে দেখিয়েছেন, কীভাবে অতীতের অনেক নারী, বিশেষ করে শিল্পী এবং লেখিকারা তাঁদের বন্ধুত্বের মাধ্যমে নিজেদের জগৎ তৈরি করেছিলেন। তাঁরা একে অপরের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন, আবার কখনো তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে।
ওয়াট স্মিথ এই সম্পর্কগুলোর দুর্বলতাগুলোও তুলে ধরেছেন, যা বইটিকে আরও বেশি বাস্তব করে তুলেছে। তাঁর মতে, বন্ধুত্বের সীমাবদ্ধতাগুলো স্বীকার করার মাধ্যমেই আমরা এর আসল সৌন্দর্য অনুভব করতে পারি।
বইয়ের শেষে, ওয়াট স্মিথ এবং সোফিয়ার মধ্যে আবার দেখা হয়। কিন্তু তাঁদের সম্পর্ক আগের মতো থাকে না। তাঁরা বুঝতে পারেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বদলে যায় এবং সম্পর্কের গভীরতাও হ্রাস পেতে পারে।
তবে লেখিকা মনে করেন, এই পরিবর্তনগুলো মেনে নিয়েই বন্ধুত্বের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায়।
“ব্যাড ফ্রেন্ড” বইটি আমাদের শেখায়, বন্ধুত্বের সম্পর্ক সব সময় নিখুঁত নাও হতে পারে। এতে রাগ, কষ্ট, এমনকি ঈর্ষা আসতেই পারে। গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই অনুভূতিগুলোকে অস্বীকার না করে, তাদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া এবং সম্পর্কটিকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা।
বইটি নারীদের বন্ধুত্বের একটি নতুন সংজ্ঞা দেয়, যেখানে দুর্বলতা এবং অপূর্ণতাগুলোও সম্পর্কের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান