সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে শিশুদের অনলাইন জগতে প্রবেশাধিকার বাড়ছে, আর এর সঙ্গে বাড়ছে তাদের শোষণ ও বিপদের সম্ভবনা। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত একটি তথ্যচিত্র ‘ব্যাড ইনফ্লুয়েন্স: দ্য ডার্ক সাইড অফ কিডফ্লুয়েন্সিং’ (Bad Influence: The Dark Side of Kidfluencing) সেই উদ্বেগের প্রতিচ্ছবি।
নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া এই তথ্যচিত্রে শিশুদের অনলাইন কন্টেন্ট তৈরি করার জগতে প্রবেশের বিপদগুলো তুলে ধরা হয়েছে, যা বিশেষভাবে অভিভাবকদের সচেতন করবে।
ডকুমেন্টারিটি মূলত কিশোরী তারকা পাইপার রকেলের জীবন ও তার মা এবং ম্যানেজার টিফানি স্মিথের কাজকর্মের ওপর আলোকপাত করে।
পাইপারের সাফল্যের পেছনে টিফানির কৌশল ছিল, ইউটিউবে ভিউ ও ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য অন্যদেরও পাইপারের সঙ্গে যুক্ত করা। ধীরে ধীরে, ‘দ্য স্কোয়াড’ নামে পরিচিত একটি দল তৈরি হয়, যেখানে আরও অনেক শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
একসময় পাইপারের ভিডিওগুলো থেকে মাসে পাঁচ লক্ষ ডলারেরও বেশি আয় হতো।
তবে সাফল্যের এই রঙিন গল্পের অন্য পিঠে ছিল গভীর অন্ধকার।
২০২১ সালে, ‘দ্য স্কোয়াড’-এর ১১ জন প্রাক্তন সদস্য টিফানি স্মিথ ও তার সহযোগী হান্টার হিলের বিরুদ্ধে শিশুশ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনেন।
তাঁদের অভিযোগ ছিল, শিশুদের সঙ্গে “অশোভন, আপত্তিকর এবং অপমানজনক” আচরণ করা হয়েছে।
এমনকি টিফানির বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগও আনা হয়।
যদিও মামলাটি পরে কোনো দায় স্বীকার ছাড়াই নিষ্পত্তি করা হয়, কিন্তু শিশুদের প্রতি হওয়া অত্যাচারের অভিযোগগুলো সমাজে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে।
তথ্যচিত্রে প্রাক্তন পারফর্মারদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, যাদের বয়স এখনো কুড়ি পেরোয়নি।
তাঁদের পরিবারের সদস্যরাও তাঁদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।
তথ্যচিত্রটি এমন একজন নারীর চিত্র তুলে ধরে, যিনি শিশুদের অনলাইন কনটেন্ট তৈরির জগতে নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য কূটকৌশল ব্যবহার করেছেন।
এখানে শিশুদের ক্যামেরার সামনে নিজেদের প্রতিভা প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হলেও, তা কিভাবে অর্থ উপার্জনের হাতিয়ারে পরিণত হয়, তা স্পষ্ট হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের অনলাইনে অংশগ্রহণের ফলে তারা বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের প্রতি যৌনআগ্রহী ব্যক্তিদের কম্পিউটারে পাওয়া কনটেন্টের ৬০ শতাংশই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে আসে।
এছাড়াও, কিশোরী ইনফ্লুয়েন্সারদের দর্শকদের মধ্যে প্রায় ৯২ শতাংশই প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ।
এই তথ্যগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শিশুদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই তথ্যচিত্রটি অভিভাবকদের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
শিশুদের অনলাইন কার্যকলাপের ওপর নজর রাখা, তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা এবং তাদের প্রতি কোনো ধরনের শোষণ যেন না হয়, তা নিশ্চিত করা জরুরি।
এই ধরনের ঘটনাগুলো আমাদের সমাজের দুর্বলতাগুলো তুলে ধরে, যা প্রতিরোধ করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও অনেক শিশুর জীবন হুমকির মুখে পড়বে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান