বদলি কাজে ঘুমের সমস্যা? কার্যকরী টিপস!

অনিয়মিত কাজের সময়সূচী কি আপনার ঘুমের পথে বাধা? ঘুমের স্বাস্থ্য উন্নত করতে কিছু পরামর্শ

বর্তমান সময়ে, আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরণের পেশায় নিয়োজিত মানুষেরা অনিয়মিত কাজের সময়সূচীর সাথে পরিচিত। পোশাক শ্রমিক থেকে শুরু করে নিরাপত্তা কর্মী, হাসপাতালের কর্মচারী কিংবা পরিবহন শ্রমিক – এদের অনেকেরই ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দে ব্যাঘাত ঘটে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়, স্বাস্থ্যহানি ঘটায় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এই আর্টিকেলে আমরা ঘুমের সমস্যা সমাধানে কিছু কার্যকরী উপায় নিয়ে আলোচনা করব, যা আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

আলো ও ঘুমের সম্পর্ক

যারা রাতের বেলা কাজ করেন, তাদের দিনের আলোতে ঘুমাতে হয়। দিনের আলো ঘুমের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা। ঘুমের পরিবেশ তৈরি করতে কিছু বিষয় অনুসরণ করা যেতে পারে:

  • ঘরের জানালা দিয়ে আলো প্রবেশ বন্ধ করতে ব্ল্যাকআউট পর্দা ব্যবহার করুন।
  • বাইরে বের হলে রোদ চশমা ব্যবহার করুন, যা আলোর প্রভাব কমাতে সাহায্য করবে।

মেলাটোনিন (Melatonin) ব্যবহারের সতর্কতা

আলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় বলে অনেকে মেলাটোনিন সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করেন। তবে এ বিষয়ে কিছু বিষয় মনে রাখা দরকার:

  • ২০২২ সালের একটি গবেষণা বলছে, শ্বাসকষ্ট, মেটাবলিক ডিসঅর্ডার এবং ঘুমের সমস্যা আছে এমন প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে মেলাটোনিন ঘুমের গুণগত মান উন্নত করতে পারে। তবে মানসিক স্বাস্থ্য বা নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা পাওয়া যায়নি।
  • বাজারে উপলব্ধ কিছু মেলাটোনিন সাপ্লিমেন্টে সঠিক পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি উপাদান থাকতে পারে।
  • মেলাটোনিনের দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার নিরাপদ কিনা, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এখনো বিতর্ক রয়েছে।

সুতরাং, কোনো সাপ্লিমেন্ট ব্যবহারের আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। বাংলাদেশে এটি সহজলভ্য নাও হতে পারে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এটি ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে।

অফ-ডে’গুলোতে ঘুমের রুটিন

অফ-ডে’গুলোতে স্বাভাবিক ঘুমের সময়ে ফেরার চেষ্টা করলে অনেক সময় তা সম্ভব হয় না। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য হয়তো ঘুমের সময় পরিবর্তন করতে হতে পারে। তবে ঘুমের স্বাভাবিক ছন্দ বজায় রাখাটা খুব জরুরি। কারণ ঘুমের এই তারতম্য ‘সোশ্যাল জেট ল্যাগ’-এর সৃষ্টি করতে পারে।

ঘুমের রুটিন তৈরি করুন

একটি নির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ করলে শরীর ঘুমের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। ঘুমের আগে কিছু আরামদায়ক কাজ করতে পারেন, যেমন বই পড়া, হালকা গান শোনা বা গরম পানিতে গোসল করা। টিভি দেখা বা মোবাইল ব্যবহারের মতো বিষয়গুলো এড়িয়ে চলুন, যা আপনাকে সজাগ করে তোলে।

ধৈর্য ধরুন

অনিয়মিত সময়ে কাজ করা শরীরের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। দিনের বেলা ঘুমানোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লাগতে পারে। সবার শরীর ভিন্নভাবে এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খায়। তাই নিজেকে সময় দিন।

চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

যদি ঘুমের সমস্যা তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলতে থাকে, তবে বুঝতে হবে আপনার ‘শিফট ওয়ার্ক ডিসঅর্ডার’ হয়েছে। এমন হলে দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সহায়তা নিন

সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে আপনি আপনার সমস্যাগুলো শেয়ার করতে পারেন। এছাড়া, পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গেও আপনার ঘুমের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে পারেন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক সমর্থন ঘুমের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।

ক্যাফিন গ্রহণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন

কাজের সময় সতেজ থাকার জন্য ক্যাফিন-যুক্ত পানীয়ের প্রয়োজনীয়তা অনেক। তবে ঘুমের আগে ক্যাফিন গ্রহণ করলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। ক্যাফিন গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মনে রাখতে পারেন:

  • ঘুমানোর অন্তত ৪-৬ ঘণ্টা আগে ক্যাফিন গ্রহণ বন্ধ করুন।
  • বিশেষজ্ঞরা দৈনিক সর্বোচ্চ ৪০০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন গ্রহণের পরামর্শ দেন। অর্থাৎ, প্রায় ৪ কাপ কফি অথবা ২ ক্যান এনার্জি ড্রিঙ্কস।
  • ঘুমের সমস্যা হলে ক্যাফিনের পরিমাণ অর্ধেক কমিয়ে দিন।

উপসংহার

অনিয়মিত কাজের সময়সূচী ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে ঘুমের স্বাস্থ্য উন্নত করা সম্ভব। নিজের জন্য একটি ঘুমের রুটিন তৈরি করুন। ঘুমের সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, আপনার সুস্থ জীবনযাত্রা আপনার ঘুমের উপর নির্ভরশীল।

তথ্য সূত্র: হেলথলাইন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *