বাজে কথা: “বেকার্সফিল্ড থ্রি”-এর মায়েদের এখন কী অবস্থা?
ক্যালিফোর্নিয়ার বেকার্সফিল্ড শহরের তিনজন বন্ধু—বেলি ডেস্পট, মিকা হলসনবে ও জেমস কুলস্টাড—২০১৮ সালের বসন্তে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন বা খুন হন। তাদের মর্মান্তিক পরিণতি এখনো অনেকের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে।
এই ঘটনার পর থেকে তাদের মায়েরা—জেইন প্যারেন্ট (বেলির মা), চেরিল হলসনবে (মিকার মা) এবং ডায়ান ‘ডি’ বার্ন (জেমসের মা)—সন্তানদের হারিয়ে ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করে চলেছেন। সম্প্রতি, ডি বার্ন মারা গেছেন, কিন্তু অন্য মায়েরা এখনো তাদের সন্তানদের হত্যারহস্য উন্মোচনের জন্য অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ছেলেদের স্মৃতি:
বেকার্সফিল্ড থ্রি-এর ঘটনাটি শুধু একটি সাধারণ অপরাধের কাহিনি নয়, বরং এটি তিনটি পরিবারের গভীর শোক এবং বিচার পাওয়ার আকুলতার গল্প। নিহতদের মধ্যে ছিলেন মিকা হলসনবে, যিনি ছিলেন একজন অভিজ্ঞ সৈনিক।
তিনি অস্ত্র তৈরি করতেন এবং পরবর্তীতে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। জেমস কুলস্টাড ছিলেন একজন সার্ফার ও উদ্ভাবক। তিনিও মাদকাসক্তির শিকার হয়েছিলেন।
বেলি ডেস্পট ছিলেন বিবাহিতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন।
ঘটনার সূত্রপাত:
২০১৮ সালের মার্চ মাসে মিকা হলসনবে নিখোঁজ হন। এরপর এপ্রিল মাসে বেলি এবং জেমসকেও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তদন্তে জানা যায়, জেমসকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে, মিকার শরীরের কিছু অংশ উদ্ধার করা হয় এবং অবশেষে কঙ্কালও পাওয়া যায়। বেলি এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
তদন্তের মোড়:
তদন্তে বেলি ডেস্পটের প্রাক্তন প্রেমিক ম্যাথিউ কুইনের বিরুদ্ধে মিকা হলসনবেকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। কুইন দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, কুইন এবং বেলি মিলে মিকাকে নির্যাতন করে হত্যা করে এবং তার দেহের বিভিন্ন অংশ গোপন করে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ম্যাথিউ ভ্যান্ডেকাস্টেলকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
মায়েদের সংগ্রাম:
সন্তানদের হারানোর পর, মায়েদের শোক যেন আরও গভীর হয়। তারা তাদের সন্তানদের হত্যারহস্য উন্মোচনের জন্য একত্রিত হন এবং নিজেরাই তদন্ত শুরু করেন।
তারা পুলিশের ওপর নির্ভরশীল না থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন এবং অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। এই মায়েরা একটি অলাভজনক সংস্থা “বেকার্সফিল্ড থ্রি চ্যারিটি” প্রতিষ্ঠা করেন, যা নিখোঁজ শিশুদের পরিবারকে সহায়তা করে এবং অপরাধ সমাধানে সাহায্য করে।
বর্তমান পরিস্থিতি:
দুঃখজনকভাবে, জেমসের মা ডি বার্ন সম্প্রতি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মৃত্যুর আগে তিনি জানতে পারেননি তার ছেলের হত্যাকারী কে।
তবে জেইনের দৃঢ়সংকল্প, তিনি ডি-এর কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে চান এবং জেমসের হত্যারহস্য উন্মোচন করতে চান। বেলিকে খুঁজে বের করার জন্য জেইন এখনো অবিরাম চেষ্টা চালাচ্ছেন।
মিকার মা চেরিলও এই লড়াইয়ে অবিচল রয়েছেন। তারা তাদের সন্তানদের জন্য ন্যায়বিচার চেয়ে যাচ্ছেন এবং অন্যদের কাছে উদাহরণ তৈরি করেছেন।
আইনের দৃষ্টিতে:
এই মামলার তদন্ত এখনো চলছে। কুইনের শাস্তি হলেও, বেলি ডেস্পটের নিখোঁজ হওয়ারহস্য এখনো অজানা। যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা অনুযায়ী, কুইনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং তাকে দীর্ঘ কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সেখানকার আইন অনুযায়ী, একজন ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হলে, তাকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়।
উপসংহার:
বেকার্সফিল্ড থ্রির ঘটনাটি একটি মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি, যা তিনটি পরিবারের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। মায়েদের অবিরাম চেষ্টা এবং ন্যায়বিচারের জন্য তাদের সংগ্রাম অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা।
তাদের এই লড়াই প্রমাণ করে, শোকের গভীরতা সত্ত্বেও, সত্যের জন্য লড়াই করা কখনো বন্ধ করা উচিত নয়।
তথ্য সূত্র: পিপল