বিশ্বজুড়ে বেকারি পর্যটনের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে, যেখানে মানুষ সুস্বাদু খাদ্যবস্তুর খোঁজে পাড়ি জমাচ্ছে দূর-দূরান্তে। এটি নিছক ভ্রমণের একটি নতুন ধারা, যেখানে গন্তব্য কোনো পরিচিত স্থান নয়, বরং সেরা বেকারি এবং তাদের মুখরোচক খাবার।
এই প্রবণতা বর্তমানে সারা বিশ্বে, এমনকি বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করছে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, উন্নত বিশ্বে ‘বেকারি ট্যুরিজম’ -এর ধারণা বাড়ছে।
এই ধরনের পর্যটনে, ভ্রমণকারীরা সুনির্দিষ্ট বেকারিগুলোতে যান এবং তাদের বিশেষত্ব উপভোগ করেন। কেউ কেউ তাদের পছন্দের একটি পেস্ট্রি বা বেকারি পণ্যের স্বাদ নিতে কয়েক ঘণ্টা এমনকি কয়েক দিনের পথ পাড়ি দেন। যেমন, স্কটল্যান্ডের এক লাইব্রেরিয়ান এবং তার স্ত্রী, একটি ভালো বেকারি থেকে প্যাস্ট্রি খাওয়ার জন্য ১৪ দিনের বেশি পথ হেঁটেছেন।
এই ধরনের পর্যটকদের কাছে, বেকারিগুলো শুধু খাবার পরিবেশন করার স্থান নয়, বরং এক একটি গন্তব্য। তারা প্রায়ই ছোট আকারের, স্থানীয় বেকারিগুলোতে ভিড় করেন, যেখানে বিশেষ উপাদান এবং ঐতিহ্যপূর্ণ রেসিপি ব্যবহার করা হয়।
এই বেকারিগুলো প্রায়ই তাদের নিজস্বতা বজায় রাখে এবং ক্লাসিক খাবারগুলোর অভিনব সংস্করণ তৈরি করে। যুক্তরাজ্যে, এই ধরনের পর্যটকদের জন্য পছন্দের জায়গা হলো, ল্যানান (Lannan) নামক একটি বেকারি, যা এডিনবার্গ-এ অবস্থিত।
এটি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে চালু হওয়ার পর থেকেই বিশ্বজুড়ে পরিচিতি লাভ করেছে। এখানকার “সিনেমন বান” এবং অন্যান্য মুখরোচক খাবারগুলি এতটাই জনপ্রিয় যে, মানুষ সুদূর কানাডা থেকেও এখানে আসে।
এছাড়াও বাথ-এর ল্যান্ডরেস (Landrace) এবং লন্ডনের বিভিন্ন বেকারির খ্যাতিও বাড়ছে। এই বেকারিগুলোতে প্রায়শই দীর্ঘ লাইন দেখা যায়, যেখানে ভ্রমণকারীরা তাদের পালা আসার জন্য অপেক্ষা করেন।
তাদের মধ্যে এক ধরনের পারস্পরিক সহযোগিতা দেখা যায়, কারণ তারা একে অপরের সাথে বেকারি এবং তাদের খাবারের অভিজ্ঞতা বিনিময় করে। এই বেকারি পর্যটনের পেছনে মূল কারণ হলো, অসাধারণ স্বাদের খাবার উপভোগের আকাঙ্ক্ষা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেখানে বিভিন্ন বেকারির খাবার এবং তাদের পরিবেশনার ছবিগুলি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। মানুষজন তাদের পছন্দের খাবার এবং বেকারির ছবি দেখে উৎসাহিত হয় এবং সেই স্থানগুলোতে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করে।
তবে, এই প্রবণতা কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করে। অনেক জনপ্রিয় বেকারি তাদের উৎপাদন সীমিত করে, যা চাহিদা আরও বাড়িয়ে তোলে। এর ফলে, ভোক্তাদের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।
বাংলাদেশেও, এই ধরনের পর্যটনের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এখানে বেকারি ট্যুরিজম এখনো সেভাবে পরিচিতি লাভ করেনি, তবে উন্নত মানের বেকারি এবং খাদ্যরসিকদের সংখ্যা বাড়ছে।
ভবিষ্যতে, সম্ভবত আমরা দেখব, মানুষ তাদের প্রিয় বেকারিগুলোর বিশেষত্ব উপভোগ করতে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভ্রমণ করছে। তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান