যুক্তরাষ্ট্রের এক আলোকচিত্রী: ক্যামেরার চোখে ভালোবাসার গল্প
দৃষ্টি আকর্ষক একটি ছবি, যেখানে দেখা যায় এক দম্পতি একটি দরজার চৌকাঠে দাঁড়িয়ে চুম্বন করছেন। ছবিটি তুলেছেন বাল্ডউইন লি নামের একজন আলোকচিত্রী।
১৯৮০-এর দশকে তিনি আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলে বসবাস করা কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মানুষের ছবি তোলার এক বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। সেই প্রকল্পেরই একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই ছবি।
বাল্ডউইন লি’র জন্ম ১৯৫১ সালে, নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিনে। শুরুতে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে এবং ছবি তুলতে তিনি বেশ দ্বিধা বোধ করতেন।
তবে ফটোগ্রাফির প্রতি ভালোবাসাই তাকে এই দ্বিধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে। তিনি ইউনিভার্সিটি অফ টেনেসি’তে ফটোগ্রাফি পড়াতেন।
ছবি তোলার জন্য প্রথমে তিনি সেখানকার স্থানীয় পুলিশের সাহায্য নিতেন। তাদের কাছ থেকে তিনি শহরের কোন জায়গাগুলো এড়িয়ে যাওয়া উচিত, সেই সম্পর্কে পরামর্শ নিতেন। এরপর সেই সব এলাকার অলিগলিতে গিয়ে ছবি তুলতেন।
তাঁর ক্যামেরার লেন্স সবসময়ই সাধারণ মানুষের প্রতি নিবদ্ধ ছিল। একটি বড় আকারের ক্যামেরা, যা ট্রাইপডের ওপর বসানো থাকত, ব্যবহার করতেন তিনি।
এর মাধ্যমে তিনি ছবি তোলার সময় তাঁর বিষয়ীর সঙ্গে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে পারতেন। কারো ছবি তোলার আগে তিনি তাদের সঙ্গে কথা বলতেন, তাদের ভালো লাগা, মন্দ লাগা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতেন। তাদের বিশেষত্ব তুলে ধরার চেষ্টা করতেন। ছবি তোলার সময় তিনি তাদের ক্যামেরার সামনে স্বাভাবিকভাবে পোজ দিতে বলতেন।
বাল্ডউইন লি’র তোলা ছবিগুলোর মধ্যে এই ছবিটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ছবিটি সম্ভবত আমেরিকার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের অগাস্টা অথবা ভালডোস্টা শহরে তোলা হয়েছিল।
ছবিতে দেখা যায়, এক দম্পতি দরজার চৌকাঠে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের পেছনের দেয়ালে একই ভঙ্গিতে একটি নারী-পুরুষের রিলিফ চিত্র খোদাই করা রয়েছে।
বাল্ডউইন লি এই ছবিটির মাধ্যমে তাদের মধ্যেকার ভালোবাসার গভীরতা ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন।
ছবি তোলার পর তিনি তাঁর বিষয়ীদের ঠিকানা সংগ্রহ করতেন এবং তাদের কাছে ছবি পৌঁছে দিতেন। অনেক সময় তিনি তাঁদের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য সেখানে যেতেন।
কেউ কেউ হয়তো ছবিটি তাঁদের বাড়িতে টাঙাতেন, আবার কারো কারো ভালো না লাগলে হয়তো তা ছিঁড়েও ফেলতেন। তবে, বেশিরভাগ সময়ই মানুষ তাঁর কাজের প্রশংসা করতেন।
বাল্ডউইন লি’র ছবিগুলো আজও মানুষের মনে গভীর রেখাপাত করে। তাঁর কাজ আমাদের ভালোবাসার গুরুত্ব এবং মানুষের প্রতি সহানুভূতি তৈরি করতে উৎসাহিত করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান