ক্যালিফোর্নিয়ার এক মরু শহর: তিন বন্ধুর হাত ধরে নতুন জীবন।
ক্যালিফোর্নিয়ার এক নির্জন প্রান্তরে অবস্থিত জ্যাকিম্বা হট স্প্রিংস। এক সময়ের জমজমাট এই শহরটি সময়ের সাথে সাথে তার জৌলুস হারায়, কিন্তু তিনজন বন্ধুর হাত ধরে আবারও জেগে উঠেছে সে।
পুরাতন একটি মোটেল এবং তার আশেপাশের কিছু জায়গা কিনে সেখানকার জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনেছেন তাঁরা।
জ্যাকিম্বা হট স্প্রিংস, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে প্রায় ৭০ মাইল পূর্বে, মেক্সিকো সীমান্তের কাছে অবস্থিত। এককালে এই শহরটি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিল।
বিশেষ করে ১৯২০ এর দশকে যখন মানুষজন গাড়িতে করে ভ্রমণ করতে শুরু করে, তখন এখানকার উষ্ণ প্রস্রবণগুলি স্বাস্থ্যকর গন্তব্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
হলিউডের অনেক তারকাও এখানে এসে সময় কাটাতেন।
কিন্তু পরবর্তীতে ইন্টারস্টেট ৮ মহাসড়ক তৈরি হওয়ার পর শহরের গুরুত্ব কমে যায় এবং পর্যটকদের আনাগোনাও হ্রাস পায়।
২০২০ সালে, সান দিয়েগোর ইন্টেরিয়র ডিজাইনার মেলিসা স্ট্রুকেল এবং তাঁর বন্ধু, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর জেফ ওসবোর্ন ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনার করবিন উইন্টার্স মিলে এই পরিত্যক্ত শহরটি পুনরায় গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন।
তাঁরা শুধু একটি পুরনো মোটেলই কেনেননি, সঙ্গে কিনেছিলেন একটি গ্যাস স্টেশন, কিছু বাড়ি, দোকান এবং একটি পুরনো স্নানাগার, এমনকি শুকিয়ে যাওয়া একটি লেকও।
শুরুতে তাঁদের লক্ষ্য ছিল একটি সুন্দর রিসোর্ট তৈরি করা।
কিন্তু তাঁরা শুধু একটি হোটেল তৈরি করেননি, বরং পুরো শহরের জীবনযাত্রাই বদলে দিয়েছেন।
তাঁরা পুরনো হোটেলটি সংস্কার করেছেন, শুকিয়ে যাওয়া লেকটিকে আবার পানিতে ভরিয়ে নতুন রূপ দিয়েছেন।
এরই সঙ্গে তাঁরা একটি ভিনটেজ পোশাকের দোকান, একটি পুরনো বাথহাউসকে কনসার্ট ভেন্যু এবং একটি কমিউনিটি সেন্টার তৈরি করেছেন।
তাঁদের এই উদ্যোগে স্থানীয় বাসিন্দারাও খুব খুশি।
নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং শহরের চেহারাই পাল্টে গেছে।
বর্তমানে, জ্যাকিম্বা হট স্প্রিংস-এ আসা পর্যটকদের জন্য উষ্ণ প্রস্রবণের পুলগুলিতে সাঁতার কাটার ব্যবস্থা রয়েছে।
এখানকার রেস্তোরাঁগুলিতে সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।
শহরের কেন্দ্রগুলোতে প্রায়ই স্থানীয় ও বাইরের শিল্পীদের নিয়ে কনসার্ট হয়।
এখানকার কমিউনিটি সেন্টারটিতে স্থানীয়দের জন্য স্বল্প মূল্যে খাবার সরবরাহ করা হয়।
মেলিসা, করবিন এবং জেফ-এর মতে, তাঁরা কেবল ব্যবসার উদ্দেশ্যে এখানে আসেননি, বরং স্থানীয় মানুষের সঙ্গে একটি পরিবারের মতো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চান।
তাঁদের পরিকল্পনা রয়েছে আরও রেস্তোরাঁ ও দোকান খোলার, এমনকি একটি রেকর্ডিং স্টুডিও তৈরি করারও।
এই পরিবর্তনের ফলে জ্যাকিম্বা হট স্প্রিংস-এর অর্থনীতিতে যেমন ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তেমনি সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়েছে।
এই গল্পটি আমাদের দেখায়, কিভাবে কয়েকজন মানুষের আন্তরিক প্রচেষ্টা একটি শহরের পুরনো ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার করতে পারে এবং নতুন করে জীবন দিতে পারে।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল + লেজার