শিরোনাম: ব্যাংককে ভবন ধসের ঘটনায় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ ১৭ জনের আত্মসমর্পণ, মিয়ানমারের ভূমিকম্পের প্রভাব
গত ২৮শে মার্চ মিয়ানমারে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পের জের ধরে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে একটি বহুতল ভবন ধসে পড়ার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড় নিয়েছে। ভবন ধসের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দেশটির প্রভাবশালী নির্মাণ ব্যবসায়ী প্রেমচাই কার্নাসুতা সহ মোট ১৭ জন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন।
এদের মধ্যে প্রকৌশলী, ডিজাইনার এবং অন্যান্য নির্মাণ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও রয়েছেন। শুক্রবার ব্যাংককের একটি থানায় তারা আত্মসমর্পণ করেন এবং তাঁদের বিরুদ্ধে পেশাগত গাফিলতির কারণে মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে।
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও কেউ আটকা পড়েছে কিনা, তা জানতে উদ্ধার কাজ চললেও, এখন ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে নিহতদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ভবনটি নির্মাণে ত্রুটি ছিল এবং নির্মাণের নকশাও যথাযথ মানসম্মত ছিল না। প্রাথমিকভাবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভূমিকম্পের সময় ভবনটি সম্ভবত সে কারণেই টিকে থাকতে পারেনি।
ব্যাংকক পোস্ট পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ভবনটির মূল কাঠামো, লিফট এবং নিম্নমানের কংক্রিট ও স্টিল ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চীনের একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ঝাং চুনলিং-কেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, তিনি চাইনিজ রেলওয়ে নং ১০ কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে এই প্রকল্পের কাজ করছিলেন।
এর আগে, তিনি থাই ব্যবসায়িক আইন লঙ্ঘনের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। অভিযোগ ছিল, তিনি চীনা কোম্পানির হয়ে কাজ করার জন্য স্থানীয় কিছু ব্যক্তিকে ব্যবহার করেছিলেন।
প্রেমচাই কার্নাসুতা, যিনি ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির প্রধান, এর আগেও একবার আইনের মারপ্যাঁচে পড়েছিলেন। ২০১৯ সালে বন্য প্রাণী শিকারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে তিনি প্রায় তিন বছর কারাদণ্ড ভোগ করেন।
২০১৮ সালে একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে বিরল প্রজাতির কালো চিতাবাঘ, কালিজ পাখি এবং মায়া হরিণ শিকারের অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এই ঘটনার পর, থাইল্যান্ড সরকার নির্মাণ আইনের মানোন্নয়ন এবং নির্মাণকাজে জড়িত সকলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে বিল্ডিং কোড কঠোরভাবে অনুসরণ করা এবং নির্মাণকাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা অপরিহার্য। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও, ভবন নির্মাণে যথাযথ নিয়ম-কানুন অনুসরণ এবং প্রকৌশলগত দুর্বলতা দূরীকরণে কর্তৃপক্ষের আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে এমন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস