শিরোনাম: মার্কিন অভিবাসন নীতি: ভয়ে উদ্বাস্তু পরিবার, কোণঠাসা ব্যবসা, আমেরিকায় পরিবর্তনের হাওয়া
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন আইন কঠোর হওয়ার ফলে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে বসবাসকারী অভিবাসী পরিবারগুলোর জীবনে নেমে এসেছে গভীর অনিশ্চয়তা। একদিকে যেমন বাড়ছে ধরপাকড়, তেমনি বহু মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে স্থানীয় অর্থনীতিতে, যা ক্ষতিগ্রস্ত করছে ব্যবসা-বাণিজ্যকে। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বেশ কিছু ঘটনা এই চিত্রটি তুলে ধরেছে।
টেক্সাসের মারিসোল নামের এক মা তার সন্তানদের স্কুলে হেঁটে যাওয়া নিরাপদ মনে করেন না। তিনি বলেন, “আমি সবসময় বলি, স্কুলে যাও, ভয় পেও না। কিন্তু শেষে ভয় হয়, তাদের নিতে গেলে যদি বাইরে থেকে ধরে নিয়ে যায়? কী হবে, যদি তারা আমাকে নেয়? শিশুদের কী হবে?”
ভার্জিনিয়ার একটি মুদি দোকানে মাংস বিক্রেতাদের কাজ চলে যাওয়ায় সেখানকার বাজার এখন প্রায় কর্মীশূন্য। ওরেগনের একটি চেরি বাগানে শ্রমিক না থাকায় ফল পচে যাচ্ছে।
জর্জিয়ার একটি শপিং মলের চিত্রটিও হতাশাজনক। সেখানে এক জুয়েলারি বিক্রেতা মারিয়া লোপেজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, “মনে হচ্ছে একদিন সবাই হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।
আটলান্টার বাইরের একটি শপিং মলে একসময় কুইনসিয়েনেরা অনুষ্ঠানের জন্য কেনাকাটার ধুম লাগতো। তরুণীরা ঝলমলে পোশাকের সন্ধানে দোকানে দোকানে ঘুরতো, পরিবারের সদস্যরা উপহার কিনতেন।
লোপিতা বাত্রেস নামের এক ব্যবসায়ী জানান, এখন সেই ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, “আমি এখন পর্যন্ত কোনো পার্টি, কুইনসিয়েনেরা বা বিয়ের কথা শুনিনি। আর যদি কেউ করে, তবে আহ, ঈশ্বর! কী ঝুঁকি, তাই না?”
মেরিল্যান্ডের একটি গির্জার ফাদার ভিদাল রিভাস জানান, তার চার্চের অনেক সদস্য দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “আমি তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু আমি দেখি, অনেক পরিবার দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়ার লিসা নামের এক নারী তার তিন সন্তানকে নিয়ে বাড়িতে থাকছেন। সাধারণত, এই সময়ে তারা ওরেগনে চেরি তোলার জন্য যেতেন।
কিন্তু অভিবাসন আইনের কড়াকড়ির কারণে এবার তারা যাননি। লিসা বলেন, “আমরা বাইরে যেতে ভালোবাসি, বিশেষ করে ওরেগনের সুন্দর জায়গাগুলোতে। কিন্তু এখন বাইরে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।
লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি রেস্টুরেন্টের মালিক জানান, অভিবাসন কর্মকর্তাদের অভিযানের গুজবের কারণে তাদের ব্যবসা কমে গেছে। অনেক কর্মচারী কাজে আসতে ভয় পান।
এই পরিস্থিতি অভিবাসী পরিবারগুলোর মধ্যে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। একদিকে যেমন তারা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত, তেমনি তাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা বলছেন, অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসা বন্ধ করে দিয়েছে, আবার অনেকে স্কুলে গেলেও ভয়ের কারণে স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনা করতে পারছে না।
শিকাগোর একটি উৎসবেও একই ধরনের প্রভাব দেখা গেছে। কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ির কারণে অনেক শিল্পী ও ব্যবসায়ী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভয় পাচ্ছিলেন। ফলে, উৎসবের দর্শক সংখ্যা কমে যায়।
এসব ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট গভীর প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়। একদিকে যেমন অভিবাসী পরিবারগুলো ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, তেমনি স্থানীয় অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন