রক্তাক্ত গোপালগঞ্জ: হাসিনার সমর্থনে বিক্ষোভে নিহত!

গোপালগঞ্জে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ, নিহত অন্তত ৪। গত বুধবার, বাংলাদেশের গোপালগঞ্জে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থকদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এতে কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছেন এবং বহু লোক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় হাসপাতাল সূত্রে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার সকালে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। গত বছর আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা ছাত্রনেতাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি নতুন রাজনৈতিক দল, ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি, শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা ও আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জের দিকে একটি মিছিল বের করার ঘোষণা দিলে এই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

এর পরেই সেখানে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কর্তৃপক্ষ পরে রাতে ওই এলাকায় কারফিউ জারি করে।

১১ মাস আগে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। বুধবারের ঘটনা দেশটির গভীর বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।

সংঘর্ষের সময়কার কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, শেখ হাসিনার সমর্থকরা লাঠি ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে এবং বেশ কয়েকটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টির নেতারা প্রায় ২০টি গাড়ির একটি বহর নিয়ে সেখানে পৌঁছালে এই ঘটনা ঘটে। খবর অনুযায়ী, ছাত্রনেতারা স্থানীয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন।

পরে সৈন্যদের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে তাঁদের একটি সাঁজোয়া গাড়িতে করে অন্য একটি জেলার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

সরকারি হাসপাতালের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অন্তত তিনজন নিহত ব্যক্তির মৃতদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে। দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’-এর খবরে বলা হয়েছে, সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।

অন্তর্বর্তী সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ছাত্রদের ওপর হামলাকারীদের ‘অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে’। ভারপ্রাপ্ত প্রধান, মুহাম্মদ ইউনুসের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে গোপালগঞ্জের ঘটনাকে ‘একেবারে নিন্দনীয়’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মে মাসে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। দলটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে এই হতাহতের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকেই দায়ী করেছে।

ছাত্রনেতা নাহিদ ইসলাম ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন এবং বৃহস্পতিবার ফরিদপুরে আরেকটি মিছিল করার সম্ভাবনা প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী ছাত্র সংগঠনটির ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বৃহস্পতিবার দেশের সব জেলা ও প্রধান শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতার কারণে দেশে বিভেদ বাড়ছে। এর ফলে জাতীয় ঐক্যের সম্ভাবনাও কমে যাচ্ছে।

তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে গণতন্ত্রের পথে শান্তিপূর্ণ উত্তরণ কঠিন হয়ে পড়বে।

উল্লেখ্য, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ইউনুস শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার তিন দিন পর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং আগামী এপ্রিল মাসে নতুন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

বর্তমানে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে এবং সরকার ভারত সরকারের কাছে তাঁকে ফেরত পাঠানোর জন্য আবেদন করেছে।

তবে ভারত এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

গোপালগঞ্জ জেলাটি রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখানেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থল অবস্থিত।

১৯৭৫ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্য নিহত হয়েছিলেন।

ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি মাসখানেক আগে ‘দেশ পুনর্গঠনের জন্য জুলাই মার্চ’ নামে একটি কর্মসূচি শুরু করে, যেখানে তারা দেশের বিভিন্ন জেলায় নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান জানানোর চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে মূলত দুটি দলের আধিপত্য ছিল – শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ এবং খালেদা জিয়ার বিএনপি।

বিএনপির পক্ষ থেকে বুধবারের সহিংসতার বিষয়ে তেমন কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *