বাংলাদেশের প্রাক্তন রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর বিদেশে পাচার করা হাজার হাজার কোটি টাকা উদ্ধারের লক্ষ্যে সময়মতো পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকটির গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করা অর্থনীতিবিদ আহসান মনসুর এই বিশাল পরিমাণ অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য এক বিশেষ অভিযান শুরু করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত এক দশকে প্রভাবশালী কিছু পরিবার যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে।
জানা গেছে, পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ প্রায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বিশাল ক্ষতি। এই অর্থ উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ১১টি বিশেষ দল গঠন করেছে, যারা পাচার হওয়া অর্থের হিসাব রাখছে এবং তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে।
গভর্নর আহসান মনসুর মনে করেন, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এই অর্থের বড় অংশ হয়তো আর পাওয়া যাবে না। তিনি আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমরা জানি, সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। সম্পদ হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যকে কেন্দ্র করে এই অভিযান শুরু হয়েছে। গভর্নর মনসুর বর্তমানে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ অফিস এবং সেখানকার আইন সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, শুধু যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এই বিষয়ে তিনি বলেন, “এই পরিবারগুলোর অনেকের সম্পদ বিশেষ করে লন্ডনে রয়েছে। আমরা মনে করি, এখানে অনেক সম্পদ পাওয়া যাবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। আল জাজিরার অনুসন্ধানী ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর লন্ডনে এবং দুবাইতে ৫০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের সম্পত্তি রয়েছে।
এছাড়াও, তার পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাজ্যে প্রায় ৩৬০টির বেশি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন। ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাইফুজ্জামান চৌধুরীর প্রায় ৪০টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে এবং তার বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকও তার বিদেশি সম্পত্তিগুলো জব্দের চেষ্টা করছে, যাতে সেগুলো বিক্রি করা না যায়। তবে সাইফুজ্জামান চৌধুরী এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন।
গভর্নর মনসুর শুধু সম্পদ জব্দেই থেমে থাকতে চান না। তিনি চান, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের কর্তৃপক্ষ এই অর্থ পাচারে সহায়তা করা আইনজীবী, ব্যাংকার এবং রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিক।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আইন ভেঙে যারা অপরাধীদের পালাতে সাহায্য করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
অর্থ পাচারকারীদের কাছ থেকে তথ্য আদায়ের জন্য তিনি তাদের সঙ্গে সমঝোতা করার বা তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার কথাও ভাবছেন। তবে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করা সময়সাপেক্ষ। গভর্নর মনসুর জানিয়েছেন, পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধারে প্রায় পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিবর্তনের কারণে অর্থ পাচার বিষয়ক তদন্তে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি তদন্ত দল এ বছর বাংলাদেশে কাজ শুরু করার কথা ছিল, কিন্তু দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি-এর তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
এই বিষয়ে গভর্নর মনসুর বলেন, “এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যজনক, তবে এটাই এখনকার পরিস্থিতি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা