যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী এক ব্যক্তির নির্বাসন প্রক্রিয়া, যার একমাত্র অবলম্বন তার প্রতিবন্ধী সন্তান।
যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী একজন ব্যক্তি, যিনি তার প্রতিবন্ধী ছেলের একমাত্র অভিভাবক, তাকে এখন নির্বাসনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে আনা পুরনো কিছু অভিযোগের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
হেউরি গোমেজ নামের ৪৩ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ডমিনিকান রিপাবলিক থেকে এসেছেন এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ বাসিন্দা। তার ১৮ বছর বয়সী ছেলে নোহ সেরিব্রাল পালসি ও মৃগী রোগে আক্রান্ত।
নোহ কথা বলতে পারে না এবং তার হাঁটাচলার ক্ষমতাও নেই। তাই সবসময় তার দেখাশোনার প্রয়োজন হয়।
ছেলের দেখাশোনার দায়িত্ব নেওয়ার উদ্দেশ্যে ছুটিতে মেক্সিকো শহর থেকে ফেরার পরই গোমেজকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিউ জার্সির একটি বিমানবন্দরে তাকে আটক করে ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (সিবিপি)।
এরপরই তার বিরুদ্ধে প্রায় এক দশক আগের দুটি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
গোমেজের আইনজীবী জানিয়েছেন, তার মক্কেলকে ‘আগত বিদেশি’ হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে এবং তার পুরনো অপরাধগুলো ‘নৈতিক অধঃপতন’-এর সামিল হিসেবে ধরা হয়েছে।
এর ভিত্তিতেই তার বিরুদ্ধে নির্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এই ঘটনার পর গোমেজের পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, গোমেজ একজন ভালো বাবা এবং তার ছেলের প্রতি তিনি খুবই যত্নশীল।
এমনকি ছেলের চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য তিনি নিজে সেলুন কর্মী হওয়ার প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।
গোমেজের বোন অরেলকুইস গোমেজ জানিয়েছেন, নোহ তার বাবাকে খুব ভালোবাসে এবং বাবার সান্নিধ্যে হাসিখুশি থাকে।
আদালতের নথিপত্রে দেখা যায়, গোমেজ তার ছেলের প্রতি কতটা দায়িত্বশীল ছিলেন। তিনি ম্যানহাটনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন, যাতে দিনের বেলায় ছেলের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।
জানা গেছে, গোমেজকে এখন পর্যন্ত তার পুরনো অপরাধের জন্য পাওয়া শাস্তির চেয়েও বেশি সময় ধরে ইমিগ্রেশন কাস্টডি বা আটক কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।
গোমেজের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তার নির্বাসন হলে নোহের জীবন কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ, বাবার সঙ্গেই সে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র অফিসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গোমেজের আটকের ঘটনা তাদের ব্যথিত করেছে। তারা মনে করেন, অভিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে শহরের সুযোগ-সুবিধাগুলো গ্রহণ করতে পারে, সেই পরিবেশ তৈরি করা উচিত।
গোমেজের আইনজীবী ব্রায়ান পু-ফলকেস বলছেন, তার মক্কেলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো পুরনো এবং এর জন্য নির্বাসনের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত কঠোর। তিনি আশা করছেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে আদালত গোমেজকে তার ছেলের কাছে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেবেন।
বর্তমানে গোমেজের পরিবার একটি অনলাইন তহবিল সংগ্রহ অভিযান শুরু করেছে, যা তাদের আইনি খরচ বহন করতে সহায়তা করবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন