নিকটতম নক্ষত্রে প্রাণের ইঙ্গিত? বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেলেন ৪ গ্রহ!

সূর্যের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রের চারপাশে নতুন চারটি গ্রহের সন্ধান! প্রাণের সম্ভাবনা ক্ষীণ

বিশ্বজুড়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মহাকাশের অজানা রহস্য উন্মোচনে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি, আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে কাছের একটি নক্ষত্র, বার্নার্ডের নক্ষত্রের (Barnard’s Star) চারপাশে চারটি নতুন গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

বার্নার্ডের নক্ষত্র, যা আমাদের থেকে প্রায় ৬ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত, একটি লাল বামন নক্ষত্র (Red dwarf)। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আবিষ্কৃত গ্রহগুলো পৃথিবীর আকারের তুলনায় বেশ ছোট। এদের ভর পৃথিবীর ভরের ১৯ থেকে ৩৪ শতাংশের মধ্যে। এই গ্রহগুলোকে ‘উপ-পৃথিবী’ (sub-Earth) হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞান ও পদার্থবিদ্যার গবেষক এবং এই গবেষণার প্রধান লেখক রিতভিক বসন্ত (Ritvik Basant) এক বিবৃতিতে বলেছেন, “এটি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ একটি আবিষ্কার। বার্নার্ডের নক্ষত্র আমাদের মহাজাগতিক প্রতিবেশী, অথচ আমরা এর সম্পর্কে খুব কমই জানি।”

নতুন গ্রহগুলো বার্নার্ডের নক্ষত্রের খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে। ফলে, এদের কক্ষপথ বেশ ছোট। উদাহরণস্বরূপ, সবচেয়ে বাইরের গ্রহটি ৭ দিনেরও কম সময়ে নক্ষত্রটিকে একবার প্রদক্ষিণ করে। বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, গ্রহগুলোর পৃষ্ঠ এতটাই উত্তপ্ত যে সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ, গ্রহগুলো নক্ষত্রের ‘বাসযোগ্য অঞ্চলের’ (Habitable Zone) বাইরে অবস্থিত।

বাসযোগ্য অঞ্চল হলো নক্ষত্রের চারপাশের এমন একটি এলাকা, যেখানে গ্রহের পৃষ্ঠে তরল অবস্থায় পানি থাকার সম্ভাবনা থাকে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, বার্নার্ডের নক্ষত্র যখন তরুণ এবং সক্রিয় ছিল, তখন এটি থেকে নির্গত হওয়া শক্তিশালী বিকিরণ, ঘন বায়ু এবং সৌর শিখা (flares) এই গ্রহগুলোর পরিবেশকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে। সম্ভবত, এই কারণে উপ-পৃথিবী আকারের গ্রহগুলোতে বায়ুমণ্ডল, পানি এবং জীবনের অস্তিত্ব নেই।

এই আবিষ্কারের জন্য হাওয়াইয়ের (Hawaii) জেমিনি নর্থ টেলিস্কোপে (Gemini North telescope) বসানো ‘মারুন-এক্স’ (MAROON-X) নামক একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এই যন্ত্র নক্ষত্রের সামান্য “দোল” (wobble) পর্যবেক্ষণ করে গ্রহের উপস্থিতি শনাক্ত করতে সক্ষম। গ্রহগুলো নক্ষত্রের উপর যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রয়োগ করে, তার কারণে নক্ষত্রের এই “দোল” সৃষ্টি হয়।

এছাড়াও, চিলির (Chile) ভেরি লার্জ টেলিস্কোপের (Very Large Telescope) ‘ইএসপ্রেসো’ (ESPRESSO) যন্ত্র থেকেও এই গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে আরও ছোট আকারের গ্রহ খুঁজে বের করতে সহায়ক হবে। এই ধরনের গ্রহগুলো কীভাবে গঠিত হয়, সে সম্পর্কে নতুন ধারণা পেতেও সাহায্য করতে পারে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং গবেষণার সহ-লেখক জ্যাকব বিন (Jacob Bean) বলেছেন, “আমরা এমন কিছু খুঁজে পেয়েছি যা সম্ভবত মানবজাতি চিরকাল জানবে।

এই আবিষ্কারের অনুভূতি অসাধারণ।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *