বেসবলে বাড়ছে আঘাতের প্রবণতা, তরুণ খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ ও সুরক্ষায় জোর দেওয়ার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।
ক্রীড়া জগতে খেলোয়াড়দের আঘাত একটি উদ্বেগের বিষয়, আর এই তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে বেসবল। সম্প্রতি, বেসবল খেলোয়াড়দের, বিশেষ করে পিচার বা বোলারদের (যাদের কাজ হলো বল ছোড়া) আঘাতের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। আঘাতের এই কারণ অনুসন্ধান এবং তা প্রতিরোধের উপায় নিয়ে আলোচনা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
খবর অনুযায়ী, আঘাতের মূল কারণ হলো খেলোয়াড়দের বেশি গতিতে বল ছোড়ার প্রবণতা।
মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, আঘাতের এই ঊর্ধ্বগতি সব স্তরেই দেখা যাচ্ছে। মেজর লিগ বেসবলে (এমএলবি) খেলোয়াড়দের ইনজুরির তালিকা ২০০৫ সালে ছিল ২১২ জন, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮৫ জনে।
শুধু তাই নয়, আহত খেলোয়াড়দের মাঠের বাইরে থাকার সময়ও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। আগে যেখানে খেলোয়াড়েরা ১৩,৬৬৬ দিন মাঠের বাইরে থাকতেন, সেখানে এখন তাদের ৩২,২৫৭ দিন মাঠের বাইরে থাকতে হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আঘাতের এই কারণগুলো খুঁজে বের করা সহজ, কিন্তু এর সমাধান খুঁজে বের করা বেশ কঠিন। এমএলবি-র ডিসেম্বর মাসে প্রকাশিত একটি ৬২ পৃষ্ঠার রিপোর্টে বলা হয়েছে, বেশি গতিতে বল ছোড়ার চেষ্টা এবং প্রতিটি বলের জন্য সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের কারণে খেলোয়াড়দের ইনজুরি বাড়ছে।
উদাহরণস্বরূপ, টমি জন সার্জারি—কনুইয়ের লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেলে এই অস্ত্রোপচার করা হয়—২০১০ সালে যেখানে ১০৪ জন খেলোয়াড়ের করতে হয়েছিল, সেখানে ২০২০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ৩১৪। যদিও ২০২৩ সালে এই সংখ্যা কিছুটা কমে ২৮১-তে দাঁড়িয়েছে।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, তরুণ খেলোয়াড়দের মধ্যেও এই আঘাতের প্রবণতা বাড়ছে। ২০১৮ সালে যেখানে হাই স্কুল পর্যায়ের সেরা খেলোয়াড়দের মধ্যে মাত্র তিনজন ঘণ্টায় ৯৫ মাইল বা তার বেশি গতিতে বল ছুড়তে পারতেন, সেখানে ২০২৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ জনে।
এছাড়া, গত বছরের শীর্ষ ১০ রাউন্ডে নির্বাচিত খেলোয়াড়দের মধ্যে ৩৫ জনের টমি জন সার্জারি করাতে হয়েছে, যেখানে ২০০৫ সালে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৪ জন।
বিশেষজ্ঞ এরিক ক্রেসি, যিনি পেশাদার বেসবল খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষক ও নিউ ইয়র্ক ইয়ান্কিসের স্বাস্থ্য ও পারফরম্যান্স পরিচালক, তরুণ খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
তিনি মনে করেন, “তরুণ বয়সে খেলোয়াড়দের সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত, কারণ এখান থেকেই সমস্যা শুরু হয়। ১৩ বছর বয়সী কোনো খেলোয়াড়ের এমন ইনজুরি হওয়া উচিত নয়।
ক্রেসি আরও মনে করেন, খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দেওয়ার জন্য অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে খেলা বন্ধ রাখা উচিত।
তবে, সান ফ্রান্সিসকো জায়ান্টসের পিচিং কোচ জে পি মার্টিনেজ বলছেন, খেলোয়াড়দের সারা বছর খেলা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে তাঁর কোনো সমস্যা নেই। তবে, তিনি এটাও মনে করেন, সারা বছর ধরে উচ্চ-শক্তির খেলা খেলোয়াড়দের আঘাতের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
অন্যদিকে, ক্লিভল্যান্ড গার্ডিয়ানসের কোচ কার্ল উইলিস খেলার পুরনো ধরনে ফিরে আসার পরামর্শ দিয়েছেন, যেখানে খেলোয়াড়রা বলের স্থান এবং গতির পরিবর্তনের দিকে বেশি মনোযোগ দেবেন।
তাঁর মতে, “আঘাত কমাতে হলে আমাদের খেলার ধরনে পরিবর্তন আনতে হবে।
এমএলবি-র পক্ষ থেকে তরুণ খেলোয়াড়দের জন্য একটি কর্মসূচি চালু করা হয়েছে, যেখানে তাদের কাজের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, খেলোয়াড়দের বেশি ক্লান্ত হতে না দেওয়া, কারণ ক্লান্ত অবস্থায় খেলার কারণে আঘাতের ঝুঁকি বাড়ে।
এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, খেলোয়াড় এবং তাদের প্রশিক্ষকদের এই নিয়মগুলো মেনে চলা। কারণ, অনেক খেলোয়াড় মনে করেন, বেশি গতিতে বল ছোড়াটাই তাদের ভালো খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিতি এনে দেবে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস