রাগবি স্টেডিয়াম নিয়ে উদ্বেগে বাথ শহর! খেলা কি বন্ধ হবে?

**বাথের রাগবি স্টেডিয়াম: ঐতিহ্য রক্ষার লড়াইয়ে উদ্বেগে ইউনেস্কো এবং পরিবেশবিদরা**

ইংল্যান্ডের বাথ শহরে রাগবি খেলার একটি ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান হলো ‘দি রেক্রিয়েশন গ্রাউন্ড’ (The Recreation Ground), যা স্থানীয়ভাবে ‘দি রেক’ নামে পরিচিত।

বাথ রাগবি ক্লাব এই স্টেডিয়ামটির সম্প্রসারণ করতে চাইছে, কিন্তু তাদের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় অনেকেই।

কারণ, বাথ শহরটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে স্বীকৃত, যা এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রমাণ।

ঐতিহাসিক স্থাপত্য এবং সবুজ প্রকৃতির জন্য বাথ শহরের খ্যাতি রয়েছে।

এই স্টেডিয়ামটি শহরের কেন্দ্রস্থলে, অ্যাভন নদীর পাশে অবস্থিত।

বাথ রাগবি ক্লাবের স্টেডিয়াম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা পরিবেশগত উদ্বেগও তৈরি করেছে।

বাথ এবং উত্তর-পূর্ব সোমারসেট কাউন্সিলের গ্রিন পার্টির সদস্য জোয়ানা রাইট এই পরিকল্পনার বিরোধীতা করে বলেন, “আমি রাগবির বিরোধী নই, তবে এই বিষয়টি শহরের জন্য সবচেয়ে ভালো কী, সেই সম্পর্কে।”

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে স্টেডিয়ামের সম্প্রসারণ “সবুজ পরিবেশের” ক্ষতি করবে, যা ইউনেস্কোর স্বীকৃতিকে প্রভাবিত করতে পারে।

তিনি উল্লেখ করেন যে, লিভারপুল শহরটি তাদের উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়নের কারণে বিশ্ব ঐতিহ্য статуস হারিয়েছে।

অন্যদিকে, বাথ রাগবি ক্লাব তাদের স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণ ক্ষমতা ১৪,৫০০ থেকে ১৮,০০০-এ উন্নীত করতে চাইছে।

ক্লাবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা তৈরি, রাজস্ব বৃদ্ধি এবং দর্শকদের ভালো পরিষেবা দেওয়ার জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

বাথ রাগবি ক্লাবের চেয়ারম্যান ডগ রিগলেসওয়ার্থ জানিয়েছেন, “খেলাটি শহরের প্রাণ।”

বাথের স্থানীয় মানুষের কাছে রাগবি খেলা একটি আবেগের নাম।

তবে স্থানীয় কাউন্সিলর জোয়ানা রাইট খেলার দিনগুলোতে শহরের যানজট এবং বিশৃঙ্খলার কথা উল্লেখ করেন।

বাথ রাগবি ক্লাব ১৯৯০-এর দশকে শীর্ষস্থানীয় দল ছিল এবং ১৯৯৮ সালে তারা ইউরোপীয় রাগবি চ্যাম্পিয়ন্স কাপ জিতেছিল।

তবে, রাগবি ক্লাবগুলো বর্তমানে আর্থিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে স্টেডিয়াম সম্প্রসারণ করে ম্যাচ-ডে থেকে বেশি রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

পরিবেশগত দিক থেকেও এই স্টেডিয়াম সম্প্রসারণ উদ্বেগের কারণ হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের পরিবেশ সংস্থা (Environment Agency) জানিয়েছে, এই প্রকল্পের পরিবেশগত বিবৃতিতে ইউরোপীয় বিভার (এক ধরনের জলচর প্রাণী)-এর বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

এছাড়া, স্টেডিয়ামের আলো রাতের বেলায় বাদুড়ের (bat) জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাস্তবিক অর্থে, বাথ শহর ১৯৮৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে এবং ২০২১ সালে ইউরোপের অন্যতম সেরা স্পা শহর হিসেবে পরিচিতি পায়।

ইউনেস্কো কর্তৃপক্ষ অবশ্য এর আগে লিভারপুলকে ‘বিপদগ্রস্ত’ তালিকাভুক্ত করেছিল।

আইসিওএমওএস-ইউকে (ICOMOS-UK), যারা ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানগুলোর পরামর্শক, তারাও তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে।

তারা নকশার কিছু উন্নতিকে স্বাগত জানালেও, উচ্চতা কমানোর এবং নকশার পরিবর্তন করার পরামর্শ দিয়েছে।

ঐতিহ্য রক্ষার এই লড়াইয়ে এখন সবার দৃষ্টি কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের দিকে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *