ফ্রান্সের নরমান্ডিতে অবস্থিত একাদশ শতকের বিখ্যাত ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম, বায়ো টেপেস্ট্রি (Bayeux Tapestry)। এটি নিয়ে সম্প্রতি একদল ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
বিতর্কের মূল বিষয় হলো, টেপেস্ট্রিতে অঙ্কিত পুরুষাঙ্গের সংখ্যা কত, সেই বিষয়ে।
ঐতিহাসিক এই টেপেস্ট্রিটি প্রায় ৭০ মিটার লম্বা। ইংল্যান্ডে নরম্যান বিজয়ের প্রেক্ষাপট এতে সূক্ষ্মভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জর্জ গার্নেট এই টেপেস্ট্রিতে খোদাই করা পুরুষাঙ্গের সংখ্যা গণনা করে বিশ্বজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। তাঁর মতে, টেপেস্ট্রিতে ৯৩টি পুরুষাঙ্গের চিত্র রয়েছে।
এর মধ্যে ৮৮টি ঘোড়ার এবং বাকিগুলো মানুষের শরীরে অঙ্কিত।
তবে, এই গণনা নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন আরেক ইতিহাসবিদ ও বায়ো টেপেস্ট্রি বিশেষজ্ঞ ড. ক্রিস্টোফার মঙ্ক। তাঁর মতে, টেপেস্ট্রিতে ৯৪টি পুরুষাঙ্গের চিত্র রয়েছে।
ড. মঙ্ক-এর দাবি, টেপেস্ট্রির একটি অংশে দৌড়ানো এক ব্যক্তির পোশাকে পুরুষাঙ্গের ছবি রয়েছে। যদিও অধ্যাপক গার্নেট এটিকে তরবারি অথবা ছোরা রাখার খাপ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
ঐতিহাসিক এই বিতর্কের কারণ শুধু পুরুষাঙ্গের সংখ্যা নির্ণয় নয়। এর মাধ্যমে মধ্যযুগীয় শিল্পকলার ব্যাখ্যা এবং সেই সময়ের মানুষের মানসিকতা সম্পর্কে নতুন করে আলোকপাত করা হচ্ছে।
অধ্যাপক গার্নেটের মতে, এই ধরনের চিত্রকর্মগুলি মধ্যযুগীয় মানুষের রুচি এবং চিন্তাভাবনার গভীরতা বুঝতে সাহায্য করে। তাঁর মতে, টেপেস্ট্রির নকশাকার অত্যন্ত শিক্ষিত ছিলেন এবং নরম্যান বিজয়ের প্রচলিত ধারণাকে ব্যঙ্গ করার জন্য তিনি সাহিত্যিক কৌশল ব্যবহার করেছেন।
অন্যদিকে, ড. মঙ্ক মনে করেন, টেপেস্ট্রিতে অঙ্কিত পুরুষাঙ্গগুলি শিল্পীর সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণের প্রমাণ। তাঁর মতে, এই ধরনের চিত্রগুলি সেই সময়ের মানুষের শরীরের গঠন এবং সৌন্দর্য সম্পর্কে ধারণা দেয়।
ইতিহাসবিদদের এই বিতর্ক ‘হিস্টরিএক্সট্রা’ (HistoryExtra) নামক একটি পডকাস্টে আলোচনার বিষয়।
পডকাস্টের হোস্ট এবং বায়ো টেপেস্ট্রি বিশেষজ্ঞ ড. ডেভিড মুসগ্রোভের মতে, এই নতুন তত্ত্বটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
এটি প্রমাণ করে যে, এই টেপেস্ট্রি একটি বহুমাত্রিক শিল্পকর্ম, যা গভীর অধ্যয়নের দাবি রাখে এবং যা সেলাই হওয়ার প্রায় এক সহস্রাব্দ পরেও বিস্ময়কর রহস্য ধরে রেখেছে।
তথ্য সূত্র: The Guardian