নিজেই করুন রূপচর্চা! যা করা উচিত আর যা নয়, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ!

ঘরে বসে রূপচর্চা: কোনগুলি নিরাপদ, আর কোনগুলি এড়িয়ে যাওয়া উচিত?

আজকাল রূপচর্চা নিয়ে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে, বিশেষ করে নিজের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে। সৌন্দর্যচর্চার জন্য পার্লারে যাওয়ার বদলে অনেকেই এখন ঘরোয়া পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে, যেখানে বিভিন্ন ধরনের “ডু ইট ইয়োরসেলফ” (DIY) পদ্ধতির ভিডিও দেখা যায়। তবে, এই সব কি সত্যিই সহজ, যেমনটা দেখা যায়?

বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া এইসব উপাদান ব্যবহার করা কতটা নিরাপদ?

আসলে, যা ইচ্ছে তাই করার আগে আমাদের কিছু বিষয় জেনে নেওয়া দরকার। ঘরে বসে রূপচর্চা করার কিছু সুবিধা অবশ্যই আছে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে এটি ক্ষতির কারণও হতে পারে। তাই, কোন রূপচর্চাগুলো বাড়িতে করা যেতে পারে এবং কোনগুলো এড়িয়ে যাওয়া উচিত, সেই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। আসুন, সেই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

**যেগুলো বাড়িতে করতে পারেন:**

* **আলোর চিকিৎসা (Light Therapy Facials):**

ত্বকের পুনরুজ্জীবনের জন্য লাইট থেরাপি খুবই উপযোগী। এই পদ্ধতিতে বিশেষ ধরনের এলইডি মাস্ক ব্যবহার করা হয়। এটি ত্বকের কোলাজেন উৎপাদনে সাহায্য করে, রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ত্বকের প্রদাহ কমায়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, ভালো মানের এলইডি মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।

বাজারে EMA-cleared মাস্ক পাওয়া যায় যা নিরাপদ।

* **গৌ-শা (Gua Sha) ম্যাসাজ:**

গৌ-শা একটি ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ পদ্ধতি, যেখানে বিশেষ পাথরের (সাধারণত জেড) তৈরি একটি টুল ব্যবহার করে ত্বকের ম্যাসাজ করা হয়। এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, লসিকা প্রবাহে সাহায্য করে, পেশীর টান কমায় এবং ত্বককে সুস্থ রাখে। বাড়িতে গৌ-শা করার সময় সঠিক কৌশল অবলম্বন করা জরুরি।

হালকা চাপ দিয়ে, বিশেষ করে চোখের আশেপাশে ম্যাসাজ করতে হবে। ম্যাসাজের আগে অবশ্যই ত্বকে তেল ব্যবহার করুন।

* **ইএমএস ফেসিয়াল (EMS Facials):**

ইএমএস (ইলেকট্রিক্যাল মাসল স্টিমুলেশন) ডিভাইস মুখের পেশীগুলিকে সক্রিয় করে তোলে। এটি ত্বককে টানটান করতে এবং মুখের পেশীগুলির স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সাহায্য করে। বাড়িতে এই ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করার সময় সঠিক নিয়ম ও সময় মেনে চলা উচিত।

* **হেয়ার গ্লসিং (Hair Glossing):**

চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতে হেয়ার গ্লসিং একটি ভালো উপায়। এক্ষেত্রে, অ্যামোনিয়া-মুক্ত কন্ডিশনিং গ্লস ব্যবহার করা যেতে পারে, যা চুলকে মসৃণ ও চকচকে করে তোলে। তবে, কালার করা গ্লস ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এটি চুলের রঙের অসামঞ্জস্য ঘটাতে পারে।

**যেগুলো সাবধানে করতে হবে:**

* **দাঁত সাদা করা (Teeth Whitening):**

দাঁত সাদা করার জন্য বাজারে বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায়, তবে এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ, এই ধরনের পণ্যগুলির কারণে দাঁতের এনামেল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং দাঁত সংবেদনশীল হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, দাঁত সাদা করার সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত।

* **সেলফ-ট্যানিং (Self-Tanning):**

ত্বকের রং পরিবর্তন করার জন্য সেলফ-ট্যানিংয়ের ব্যবহার এখন বেশ জনপ্রিয়। তবে, এটি ব্যবহারের সময় কিছু ভুলভ্রান্তি হতে পারে, যার ফলে ত্বকে ছোপ ছোপ দাগ দেখা যেতে পারে। তাই, ধীরে ধীরে ত্বককে ট্যান করার জন্য উপযুক্ত পণ্য ব্যবহার করা উচিত।

**যেগুলো পেশাদারের সাহায্য নেওয়া উচিত:**

* **মাইক্রোনিডলিং (Microneedling):**

ত্বকের জন্য মাইক্রোনিডলিং খুবই কার্যকরী, তবে এটি বাড়িতে করা উচিত নয়। কারণ, এই পদ্ধতিতে ত্বকে সূক্ষ্ম ছিদ্র তৈরি করা হয়, যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই, এই চিকিৎসা অবশ্যই প্রশিক্ষিত ত্বক বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করানো উচিত।

* ** lash lift:**

চোখের পাপড়ি সুন্দর করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তবে, এটি বাড়িতে করা খুবই কঠিন। কারণ, এর জন্য সঠিক কৌশল এবং সময়জ্ঞান প্রয়োজন।

* **ভ্রু ল্যামিনেশন (Brow Lamination):**

ভ্রু ঘন ও সুন্দর দেখানোর জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তবে, এটি বাড়িতে করলে ত্বকে জ্বালাপোড়া হতে পারে।

* **জেল ম্যানিকিউর ও পেডিকিউর (Gel Manicures and Pedicures):**

নখ সুন্দর করার জন্য জেল ম্যানিকিউর ও পেডিকিউর এখন খুব জনপ্রিয়। তবে, এটি করার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।

রূপচর্চা বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, নিজের ত্বকের ধরন এবং প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। কোনো কিছু করার আগে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

তথ্য সূত্র: The Guardian

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *