মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার চীনের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর তাদের বিধিনিষেধ আরও কঠোর করেছে। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে, এখন থেকে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সহযোগী বা সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর (যেগুলোর মালিকানা অন্তত ৫০ শতাংশ) ওপরও একই ধরনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে।
ওয়াশিংটন মনে করে, এর মাধ্যমে তারা প্রযুক্তি পাচার রোধ করতে পারবে এবং তাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নীতির স্বার্থ রক্ষা হবে। এই পদক্ষেপের কারণে চীন বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছে এবং এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ জানিয়েছে, এই নতুন নিয়মের ফলে চীনের কয়েক হাজার কোম্পানির ওপর প্রভাব পড়বে। এর প্রতিক্রিয়ায়, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এই পদক্ষেপকে ‘চরম বিদ্বেষপূর্ণ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, চীন তাদের কোম্পানিগুলোর অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
বেইজিং ওয়াশিংটনের প্রতি দ্রুত ভুল সংশোধন এবং চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর ‘অযৌক্তিক নিপীড়ন’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।
এই পদক্ষেপ মূলত এমন একটি সময়ে নেওয়া হলো, যখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। এর আগে, ট্রাম্প প্রশাসনও চীনা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর চাপ বাড়িয়েছিল।
নতুন বিধিনিষেধের আওতায় আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো হুয়াওয়ে, ওয়াইএমটিসি (YMTC), এবং ডিজেআই (DJI)। এই কোম্পানিগুলো যাতে তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিধিনিষেধ এড়াতে না পারে, সেটি নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, এই পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো যাতে তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে রফতানি নিয়ন্ত্রণের বিধি লঙ্ঘন করতে না পারে। এর ফলে সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারযোগ্য প্রযুক্তির অপব্যবহারও রোধ করা যাবে।
এই বিধিনিষেধের কারণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, সেমিকন্ডাক্টর, অত্যাধুনিক রোবোটিক্স এবং সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম তৈরীর সঙ্গে জড়িত অনেক কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছে। তারা মনে করেন, এর ফলে বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি সরবরাহ শৃঙ্খলে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে।
উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘এন্টিটি লিস্ট’-এ থাকা কোম্পানিগুলোর ওপর রফতানির ক্ষেত্রে বিশেষ লাইসেন্স নিতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্তির বর্তমান পদ্ধতি ‘অকার্যকর’। উদাহরণস্বরূপ, হুয়াওয়ে-এর কথা উল্লেখ করা যায়।
হুয়াওয়ে তাদের স্মার্টফোন ব্র্যান্ড ‘অনার’ বিক্রি করে দেওয়ার পরেও, সেটি ব্ল্যাকলিস্টে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এই ধরনের ঘটনার মাধ্যমে চীনা কোম্পানিগুলো কিভাবে মার্কিন বিধি-নিষেধ এড়াতে পারে, সেটিও আলোচনায় এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কিছু কোম্পানিকে এই নতুন নিয়মের আওতামুক্ত হওয়ার জন্য ৬০ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন