ভোর রাতে মৃদু ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল চীনের রাজধানী বেইজিং। বুধবার স্থানীয় সময় ভোর ১টা ২১ মিনিটে আঘাত হানে ৪.৫ ম্যাগনিটিউডের এই ভূমিকম্প।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস (USGS) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল বেইজিংয়ের নিকটবর্তী শহর, তিয়ানজিনের একটি উপশহরে, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরে।
চীনের ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক কেন্দ্র (China Earthquake Networks Center) ভূমিকম্পের মাত্রা ৪.২ এবং গভীরতা ২০ কিলোমিটার বলে উল্লেখ করেছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল প্রতিবেশী হেবেই প্রদেশের ইয়ংকিং কাউন্টিতে, যা বেইজিং থেকে ১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
ভূমিকম্পের কারণে বেইজিংয়ের অনেক বাসিন্দার ঘুম ভেঙে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ঘর-দোর কাঁপার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
বেইজিংয়ের ভূমিকম্প বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কারণে শহরের কোনো ভবনের কাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় এর কোনো প্রভাব পড়বে না। এমনকি ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের কারণে এখানকার ভূ-কম্পন সংক্রান্ত কার্যকলাপেও কোনো পরিবর্তন আসবে না।
বেইজিং প্রায় ২ কোটি ২০ লক্ষ মানুষের শহর। এর আশেপাশে ভূমিকম্পের ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটে থাকে। বেইজিং সমভূমি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা, এখানে এক ডজনের বেশি ফল্ট লাইন রয়েছে, যার মধ্যে একটি শহরের উত্তর-পূর্বের শুনয়ি জেলা থেকে কেন্দ্র হয়ে শহরের ভেতর দিয়ে গেছে।
তবে, অনেক বাসিন্দার কাছে মাঝরাতে এমন মৃদু কম্পন একটি নতুন অভিজ্ঞতা ছিল। ভূমিকম্পের পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
বেইজিংয়ের বাসিন্দারা তাদের ঘর কাঁপার ভিডিও পোস্ট করতে শুরু করেন এবং তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।
একজন বেইজিং বাসিন্দা জানান, তিনি তার মোবাইলে ভূমিকম্পের সতর্কবার্তা পাওয়ার পরেই বিষয়টি বুঝতে পারেন। তিনি দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন।
কারণ তার মনে হয়েছিল, কম্পনের মাত্রা তেমন গুরুতর নয় এবং তার ফোনে প্রদর্শিত তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের কেন্দ্র এবং বেইজিংয়ে এর প্রভাব খুবই কম হবে।
শহরের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, চিরিমিরি লি জানান, তার রুমমেটের ফোনে অ্যালার্ম বাজার পরেই তিনি সতর্ক হন। প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, হয়তো অ্যালার্ম ভুল সময়ে সেট করা হয়েছে।
কিন্তু পরে তিনি বুঝতে পারেন, হালকা যে ঝাঁকুনি তিনি অনুভব করছিলেন, তা আসলে ভূমিকম্পের কারণেই। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার রুমের অন্যদেরও বিষয়টি জানান। এরপর তারা দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন।
বাইরে এসে দেখেন, অনেকেই ততক্ষণে ঘর ছেড়ে বাইরে চলে এসেছেন। ছাত্রছাত্রীরা প্রায় আধা ঘণ্টা খোলা জায়গায় অপেক্ষা করেন, এরপর ধীরে ধীরে সবাই তাদের নিজ নিজ কক্ষে ফিরে যান।
চিরিমিরি বলেন, ভূমিকম্পের সময় প্রথমে তার একটু ভয় লেগেছিল, তবে সবাই মিলে যখন বাইরে বের হন, তখন তাদের মধ্যে ভয় কমে যায়। তিনি আরও জানান, এর আগে তিনি শুধু ছোটবেলায় একবার ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে মন্তব্য করেছেন, যারা ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে এসেছিলেন, তাদের অধিকাংশই ছিলেন শিক্ষার্থী। অনেকে মজা করে লিখেছেন, অফিসের কর্মীরা হয়তো গভীর ঘুমে ছিলেন, ভূমিকম্পের বিষয়টি তাদের কানেই আসেনি।
তথ্যসূত্র: সিএনএন