বেলারুশে নারী রাজবন্দীদের উপর নিপীড়ন: শিশুদের হারানোর হুমকি!

বেলারুশের কারাগারে নারী রাজনৈতিক বন্দীদের উপর নির্যাতন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর চিত্র।

বেলারুশে রাজনৈতিক বন্দীদের উপর শাসনের নামে চালানো হচ্ছে চরম নির্যাতন। দেশটির কারাগারে আটক নারী রাজনৈতিক বন্দীদের প্রতি কর্তৃপক্ষের নির্দয় আচরণ বিশ্বজুড়ে নিন্দিত হচ্ছে।

সেখানকার কারাগারে নারীদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি মৌলিক অধিকারগুলোও হরণ করা হচ্ছে। কারাগারের পরিবেশ অত্যন্ত অমানবিক এবং সেখানে স্বাস্থ্যবিধি ও চিকিৎসার সুযোগ খুবই সীমিত।

সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসের (Associated Press) সূত্রে জানা গেছে, বেলারুশের কারাগারে নারীদের ওপর অত্যাচারের মাত্রা এতটাই গুরুতর যে তা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। কারাগারে আটক নারীদেরকে প্রায়ই তাদের সন্তানদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয় এবং তাদের প্যারেন্টাল রাইট বা অভিভাবকত্বের অধিকার কেড়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

কারাগারের ভেতরে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়। ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগেও তাদের চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয় না। এমন ঘটনাও ঘটেছে, যেখানে কারাগারে বন্দি অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

বেলারুশের মানবাধিকার সংগঠন ‘ভিয়াসনা’ (Viasna) জানিয়েছে, কারাগারে নারীদের প্রতি সহিংসতার ঘটনাগুলো বিশেষভাবে উদ্বেগের। তাদের উপর শারীরিক নির্যাতন করা হয়, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

অনেক ক্ষেত্রে, নারীদেরকে নির্জন কারাবাসে পাঠানো হয় এবং তাদের বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়।

বেলারুশের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো দীর্ঘদিন ধরে দেশটিতে একনায়কতন্ত্র কায়েম রেখেছেন। তার শাসনের বিরুদ্ধে সামান্যতম প্রতিবাদ করলেই কঠোর হস্তে দমন করা হয়।

২০১৮ সালের এক নির্বাচনের পর সরকার বিরোধীদের উপর ব্যাপক ধরপাকড় চালায় এবং হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করে। এরপর থেকে কারাগারে রাজনৈতিক বন্দীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বন্দী নারীদের মধ্যে অনেকে তাদের কারাজীবনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেছেন। তাদের কথায় উঠে এসেছে, কিভাবে তাদের মৌলিক অধিকারগুলো অস্বীকার করা হয়েছে এবং কীভাবে তারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

অনেক নারীকে দিনের পর দিন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাটাতে হয় এবং তাদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরাও বেলারুশের কারাগারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা সেখানকার নারীদের প্রতি “অমানবিক” আচরণের নিন্দা করেছেন এবং কর্তৃপক্ষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে, আন্তর্জাতিক মহল বেলারুশ সরকারের প্রতি মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। একইসঙ্গে কারাগারে আটক সকল রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি এবং তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *