বেলারুশের বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা সের্গেই টিখানভস্কির মুক্তি মিলেছে। দীর্ঘদিন কারাবন্দী থাকার পর সম্প্রতি তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার বিরল সফরের পরই এই ঘটনাটি ঘটেছে। টিখানভস্কি, যিনি বিরোধী দলের নির্বাসিত নেত্রী স্বেতলানা টিখানভস্কায়ার স্বামী, ২০২০ সাল থেকে বন্দী ছিলেন।
শনিবার স্বেতলানা টিখানভস্কায়ার দল এই খবরটি নিশ্চিত করেছে। টিখানভস্কির মুক্তি পাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে বেলারুশ কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করে যে দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো মিনস্কে ইউক্রেন বিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত, কেইথ কেলগের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
টিখানভস্কায়ার অফিসিয়াল টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, টিখানভস্কি একটি সাদা মাইক্রোবাস থেকে নামছেন।
তার মাথা ন্যাড়া ছিল এবং মুখে ছিল হাসি। এরপর তিনি স্বেতলানাকে জড়িয়ে ধরেন, যা দেখে উপস্থিত সমর্থকরা উল্লাস প্রকাশ করেন।
স্বেতলানা টিখানভস্কায়া সাংবাদিকদের বলেন, “আমার স্বামী মুক্তি পেয়েছেন, আমার হৃদয়ে আনন্দের ঢেউ লেগেছে।
তবে আমাদের কাজ এখনো শেষ হয়নি, কারণ বেলারুশে এখনো ১,১০০ জনের বেশি রাজনৈতিক বন্দী কারাগারে বন্দী রয়েছেন।”
২০২০ সালের নির্বাচনে লুকাশেঙ্কোর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেওয়ার পর টিখানভস্কিকে বন্দী করা হয়েছিল।
তার গ্রেপ্তারের পর, তার স্ত্রী স্বেতলানা তার হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং দেশজুড়ে ব্যাপক জনসমর্থন লাভ করেন।
নির্বাচনের ফলাফলে লুকাশেঙ্কো ষষ্ঠবারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তবে বিরোধী দল ও পশ্চিমা বিশ্ব এই নির্বাচনকে জালিয়াতি বলে অভিহিত করে।
নির্বাচনের পর ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হলে স্বেতলানা টিখানভস্কায়া কর্তৃপক্ষের চাপের মুখে দেশ ত্যাগ করেন।
এরপর টিখানভস্কিকে জনসাধারণের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে সাড়ে ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এছাড়াও বেলারুশের কারাগারে এখনো অনেক বিরোধী নেতা বন্দী রয়েছেন।
তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অ্যালেস বাইয়ালিয়াৎস্কি, যিনি ১০ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন।
এছাড়া, লুকাশেঙ্কোর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পরিচিত ভিক্টর বাবাইকো এবং ২০২০ সালের গণবিক্ষোভের প্রভাবশালী নেতা মারিয়া কোলেসনিকোভাও এখনো কারাবন্দী রয়েছেন।
টিখানভস্কির সঙ্গে রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টির দীর্ঘদিনের সংবাদদাতা ইগর কারনেইকেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
মার্কিন সরকার-অর্থায়িত এই সংবাদমাধ্যমটি এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। ইগর কারনেই বেলারুশ ও রাশিয়ার প্রভাবশালী সংবাদপত্রেও কাজ করেছেন।
তাকে চরমপন্থার অভিযোগে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, যদিও তিনি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
লুকাশেঙ্কোর সরকারের সমালোচক যে কেউ, তাদের চরমপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
ফলে রেডিও ফ্রি ইউরোপ/রেডিও লিবার্টির বেলারুশিয়ান বিভাগে কাজ করা বা এর বিষয়বস্তু প্রচার করাও একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
সংবাদমাধ্যমটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিফেন ক্যাপুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, “বেলারুশ কর্তৃপক্ষের হাতে নির্যাতিত এই সাহসী সাংবাদিককে মুক্তি দেওয়ায় আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।”
২০২০ সালের বিক্ষোভ কভার করার সময় ইগর কারনেইকে বেশ কয়েকবার আটক করা হয়েছিল।
তার অনেক সহকর্মীর মতো, তিনি দমন-পীড়ন সত্ত্বেও বেলারুশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
২০২৩ সালের জুলাই মাসে তার অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তার ফোন ও কম্পিউটার জব্দ করার পর তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়।
বেলারুশ আরও একজন বন্দীকে মুক্তি দিয়েছে, যিনি বেলারুশিয়ান শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
এস্তোনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অ্যালান রয়িওকে গত জানুয়ারিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং একটি চরমপন্থী সংগঠন প্রতিষ্ঠার অভিযোগে সাড়ে ৬ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
তথ্য সূত্র: সিএনএন