বেলারুশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর সপ্তমবারের মতো ক্ষমতা গ্রহণ, বিরোধীদের কড়া হুঁশিয়ারি।
২৭শে মার্চ, ২০২৫, বেলারুশের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো সপ্তমবারের মতো দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। রাজধানী মিনস্কে এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে তিনি এই শপথ নেন।
দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা লুকাশেঙ্কো তার সমালোচকদের প্রতি তীব্র হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, তাদের ‘ভবিষ্যত নেই’।
লুকাশেঙ্কো এমন এক সময়ে এই শপথ নিলেন, যখন তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। পশ্চিমা বিশ্ব তাকে ‘ইউরোপের শেষ স্বৈরাচারী’ হিসেবেও অভিহিত করে থাকে।
শপথ গ্রহণের পর দেওয়া ভাষণে ৭০ বছর বয়সী লুকাশেঙ্কো বলেন, তার দেশের গণতন্ত্র তাদের চেয়ে অনেক বেশি, যারা এটিকে মডেল হিসেবে উপস্থাপন করে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অর্ধেক তার ‘স্বৈরাচারিতা’, অর্থাৎ জনগণের প্রকৃত ব্যবসা এবং স্বার্থ রক্ষার ‘স্বৈরাচারিতা’র স্বপ্ন দেখে।
লুকাশেঙ্কোর এই ক্ষমতা গ্রহণের দিনটিতে, বিদেশে বসবাস করা বিরোধী সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছে। তারা ১৯১৮ সালে রুশ সাম্রাজ্যের পতনের পর বেলারুশের স্বল্পকালীন স্বাধীনতা ঘোষণার বার্ষিকী পালন করে।
বেলারুশের বিরোধীদলীয় নেত্রী স্বেতলানা টিখানভস্কায়া, যিনি বর্তমানে নির্বাসনে রয়েছেন, লিথুয়ানিয়ার রাজধানী ভিলনিয়াসে স্বাধীনতা ঘোষণার ১০৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে তিনি কারাবন্দী তার স্বামীর ছবি হাতে নিয়ে প্রতিবাদ জানান।
২০২০ সালের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠে, যা পরবর্তীতে বড় ধরনের বিক্ষোভের জন্ম দেয়। এই বিক্ষোভ দমনে সরকারের কঠোর পদক্ষেপে কয়েক হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং অনেককে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়।
ওই নির্বাচনের ফলকে প্রত্যাখ্যান করে বিরোধী দলগুলো। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, লুকাশেঙ্কো নির্বাচনে প্রায় ৮৭ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। যদিও বিরোধীদের দাবি, নির্বাচন ছিল প্রহসনের নামান্তর।
লুকাশেঙ্কোর সমালোচকরা বলছেন, তিনি ১৯৯৪ সাল থেকে বেলারুশকে এক প্রকার ‘লৌহ শাসনের’ মাধ্যমে শাসন করছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমর্থন ও সহায়তা নিয়ে তিনি টিকে আছেন।
এমনকি ইউক্রেন যুদ্ধের সময় বেলারুশের ভূমি ব্যবহার করতে রাশিয়াকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, লুকাশেঙ্কো সম্ভবত পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে পারেন, যাতে করে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমানো যায় এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করা যায়।
বিরোধী নেত্রী স্বেতলানা টিখানভস্কায়া বলেছেন, তাদের লক্ষ্য হলো রাশিয়া ও লুকাশেঙ্কোর স্বৈরাচারিতা থেকে মুক্তি পাওয়া এবং বেলারুশকে ইউরোপীয় দেশগুলোর কাতারে ফিরিয়ে আনা।
মানবাধিকার সংস্থা ‘ভিয়াসনা’ ও অন্যান্য কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন এক বিবৃতিতে বলেছে, লুকাশেঙ্কোর ক্ষমতা ধরে রাখা ‘অবৈধ’। তাদের মতে, নির্বাচনের সময় নাগরিক সমাজ, স্বাধীন গণমাধ্যম, বিরোধী দল ও ভিন্নমতের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে।
বেলারুশে বর্তমানে ১,২০০ জনের বেশি রাজনৈতিক বন্দী রয়েছে। এদের মধ্যে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী আলেস বিয়ালিয়াটস্কি অন্যতম।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস