বেলারুশ থেকে বিতাড়িত হতে রাজি নন, এরপরই নিখোঁজ বিরোধী নেতা!

বেলারুশের বিরোধী দলের নেতা মিকলাই স্ট্যাটকেভিচকে (Mikalai Statkevich) মুক্তির পর দেশ থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা করা হলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। মানবাধিকার কর্মীরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং বেলারুশ সরকারের কাছে স্ট্যাটকেভিচের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য জানতে চেয়েছেন।

গত মাসে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক বন্দীকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এর অংশ হিসেবে মুক্তি পাওয়া বন্দীদের মধ্যে ছিলেন ৬৯ বছর বয়সী স্ট্যাটকেভিচ। তাদের মধ্যে অনেকেই যখন লিথুয়ানিয়া সীমান্তের দিকে একটি বাসে করে যাচ্ছিলেন, তখন স্ট্যাটকেভিচ আচমকা এর প্রতিবাদ করেন।

তিনি জোর করে বাসের দরজা খুলে বেরিয়ে যান এবং নিজের জন্মভূমি ত্যাগ করতে অস্বীকার করেন।

এই ঘটনার পর থেকে, ১১ই সেপ্টেম্বর থেকে স্ট্যাটকেভিচের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার সহযাত্রী মাকসিম ভিনিয়ার্স্কি জানিয়েছেন, স্ট্যাটকেভিচ দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য লড়াই করতে প্রস্তুত ছিলেন।

এমনকি বাসের ভেতরে তিনি তার প্রয়োজনীয় হৃদরোগের ওষুধও ফেলে যান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সীমান্ত অঞ্চলে কয়েক ঘণ্টা থাকার পর, মুখোশ পরা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা স্ট্যাটকেভিচকে ধরে বেলারুশে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো পরবর্তীতে জানান, স্ট্যাটকেভিচ বেলারুশে ফিরে এসেছেন, তবে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি।

২০২০ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর সরকার বিরোধী বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় স্ট্যাটকেভিচকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এমনকি ২০২২ সালে তাকে চরমপন্থী হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়।

স্ট্যাটকেভিচ দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ছিলেন এবং এর আগেও তাকে বিভিন্ন সময়ে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। তিনি বেলারুশের দীর্ঘতম সময় ধরে বন্দী থাকা বিরোধী দলের রাজনীতিবিদ।

স্ট্যাটকেভিচের স্ত্রী মারিনা আডামোভিচ স্বামীর মুক্তির জন্য বেলারুশে ফিরে আসেন। তিনি জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন, কিন্তু তার স্বামীর বিষয়ে কোনো তথ্য পাননি।

মারিনা আশঙ্কা করছেন, তার স্বামীর স্বাস্থ্য নিয়ে গুরুতর কোনো সমস্যা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো স্ট্যাটকেভিচের এই ঘটনাকে জোরপূর্বক গুমের শামিল হিসেবে বর্ণনা করেছে। তারা বেলারুশ সরকারের কাছে তার নিরাপত্তা এবং অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের দাবি জানিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লুকাশেঙ্কো রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে অন্য কর্মীদের বন্দী করে তাদের সঙ্গে “কমোডিটি”র মতো আচরণ করছেন।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *