বাংলাদেশের শহরগুলোতে পুরনো বাড়িঘর ভেঙে যে আবর্জনা তৈরি হয়, তা থেকে মূল্যবান জিনিস খুঁজে বের করার এক নতুন ধারণা জনপ্রিয় হচ্ছে। বেলজিয়ামের ল্যুভেন শহরে এই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এক অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা পরিবেশের সুরক্ষার পাশাপাশি স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানও তৈরি করছে।
ল্যুভেনের ডেপুটি মেয়র থমাস ভ্যান ওপেনস এই প্রকল্পের মূল উদ্যোক্তা। তাঁর মতে, শহরের ভেতরে যা প্রবেশ করে, তা যেন শহরেই থাকে, অর্থাৎ কোনো কিছুই যেন বাইরে ফেলে দেওয়া না হয়।
তাঁর এই ধারণা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ল্যুভেন শহরে পুরাতন বাড়িঘর ভেঙে সেখানে ‘আরবান মাইনিং’ বা শহরের খনি খনন করার মতো করে মূল্যবান জিনিস পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে।
শহরের পুরনো বাড়িগুলো ভেঙে ফেলার আগে, সেখানকার ইট, পাথর, কাঠের কাঠামো, স্টিলের বিমসহ অন্যান্য জিনিস পরীক্ষা করে দেখা হয়। এরপর সেগুলো সারাই করে আবার ব্যবহারের উপযোগী করা হয়।
এই কাজে সহায়তা করেন কেলি সেম্পেলসের মতো কর্মীরা, যারা মূলত নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁরা নতুন কাজের সুযোগ পেয়েছেন।
এছাড়াও, ইরাক, ফিলিস্তিন, ইথিওপিয়া, মালি ও ককেশাসের মতো বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরাও এই প্রকল্পে কাজ করছেন।
এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হলো বর্জ্য হ্রাস করা এবং একটি ‘সার্কুলার ইকোনমি’ বা চক্রাকার অর্থনীতি তৈরি করা। এর মাধ্যমে, ব্যবহৃত জিনিসগুলো পুনর্ব্যবহার করে পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব কমানো সম্ভব।
ইউরোপীয় কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ব্যবহৃত প্রায় ৪০ শতাংশ শক্তি ভবনগুলোতে খরচ হয়, যা গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের অন্যতম কারণ।
তাই, ল্যুভেন শহর ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষ হওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে এবং এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পুরোনো ভবন থেকে উপকরণ পুনরুদ্ধার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এই প্রকল্পের আওতায় ‘মেটেরিয়ালেনব্যাঙ্ক’ নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তারা পুরোনো ভবনের জিনিসপত্র পুনরুদ্ধার করে, যা অন্যথায় ফেলে দেওয়া হতো।
এই উপকরণগুলো হয় সরাসরি পুনরায় ব্যবহার করা হয়, অথবা সেগুলোকে অন্য কাজে লাগানো হয়। যেমন, পুরনো স্টিলের কাঠামোকে নতুন করে অন্য কাঠামো তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও, স্থানীয় কারিগর ও উদ্যোক্তাদের জন্য একটি কর্মশালা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে তাঁরা এই পুনরুদ্ধার করা উপকরণ ব্যবহার করে নতুন জিনিস তৈরি করতে পারেন। ব্রাম দে রিডার নামের একজন উদ্যোক্তা পুরনো কাঠ ব্যবহার করে ক্লাইম্বিং ওয়াল তৈরি করেন।
ল্যুভেনের এই প্রকল্পটি শুধু পরিবেশের সুরক্ষাই করে না, বরং সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখে। এখানে, যারা দীর্ঘদিন ধরে বেকার ছিলেন এবং যাদের কাজের সুযোগ কম, তাঁদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে যেমন বর্জ্য হ্রাস করা হচ্ছে, তেমনি অন্যদিকে স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হচ্ছে।
ল্যুভেনের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। আমাদের দেশের শহরগুলোতেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এমন উদ্ভাবনী চিন্তা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে, যা পরিবেশের সুরক্ষা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা করবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান