বেন অ্যান্ড জেরি’স-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা জেরি গ্রিনফিল্ড, তাদের মূল কোম্পানি ইউনিলিভারের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে আইসক্রিম ব্র্যান্ডটি থেকে পদত্যাগ করেছেন। ব্র্যান্ডটির সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে ইউনিলিভারের বিধিনিষেধের কারণেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গ্রিনফিল্ডের মতে, ইউনিলিভার ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের অসন্তুষ্ট হওয়ার ভয়ে বেন অ্যান্ড জেরি’স-কে চুপ থাকতে বাধ্য করছে।
গ্রিনফিল্ড জানিয়েছেন, “আমি মনে করি, ন্যায়বিচার, সমতা এবং আমাদের সকলের মানবিক মূল্যবোধের পক্ষে দাঁড়ানোটা এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ, বেন অ্যান্ড জেরি’স-কে চুপ করিয়ে দেওয়া হয়েছে, কারণ তারা ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের রুষ্ট করতে ভয় পায়।” তিনি আরও বলেন, “আমি খুবই দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমি আর বেন অ্যান্ড জেরি’সের কর্মচারী হিসেবে থাকতে পারছি না।”
২০০০ সালে গ্রিনফিল্ড এবং তাঁর সহযোগী বেন কোহেন তাঁদের কোম্পানিটি ইউনিলিভারের কাছে বিক্রি করেন।
সেই সময় তাঁদের একটি নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল যে, তাঁরা তাঁদের নিজস্ব মূল্যবোধ অনুযায়ী কাজ করতে পারবেন। গ্রিনফিল্ডের কথায়, “ইউনিলিভারের মালিকানায় আসার পর, গত কুড়ি বছর ধরে বেন অ্যান্ড জেরি’স শান্তি, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলেছে। যা ছিলো আমাদের কাছে কোনো বিমূর্ত ধারণা নয়, বরং বিশ্বের বাস্তব ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি খুবই হতাশ যে, আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য হয়েছি যে, সেই স্বাধীনতা, যা ইউনিলিভারের কাছে আমাদের কোম্পানি বিক্রির মূল ভিত্তি ছিল, সেটি এখন আর নেই।”
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়, ইউনিলিভারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা জেরি গ্রিনফিল্ডের এই মতের সঙ্গে একমত নয় এবং তারা দু’জন প্রতিষ্ঠাতা, গ্রিনফিল্ড ও কোহেনের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা চালিয়ে যেতে চায়।
সম্প্রতি, গ্রিনফিল্ড এবং কোহেন, যাঁরা এখন আর কোম্পানির পরিচালনায় নেই, তাঁরা ম্যাগনাম আইসক্রিম কোম্পানি বোর্ডের কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলেন। যেখানে তাঁরা বেন অ্যান্ড জেরি’স-কে স্বাধীনভাবে পরিচালনার জন্য আলাদা করার আবেদন জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, বেশ কয়েকটি ইস্যুতে তাঁদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা গিয়েছিল, যার মধ্যে অন্যতম ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি এবং গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ নিয়ে তাঁদের মতামত।
এর আগে, ২০২১ সালে বেন অ্যান্ড জেরি’স বিতর্কিত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে তাদের পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেয়। তারা জানায়, এই সিদ্ধান্ত তাদের সামাজিক সচেতনতার নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
এই পদক্ষেপের জেরে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। এছাড়া, গত মার্চ মাসে বেন অ্যান্ড জেরি’স, ইউনিলিভারের বিরুদ্ধে তাদের চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ আনে।
তাদের অভিযোগ ছিল, সামাজিক বিষয় নিয়ে ব্র্যান্ডটির মন্তব্য প্রকাশের ক্ষেত্রে ইউনিলিভার বাধা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে, সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভিড স্টিভারকে অপসারণের পেছনেও ছিল এই কারণ।
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে, বেন অ্যান্ড জেরি’স অভিযোগ করে যে, ইউনিলিভার গর্ভপাত, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক একটি পোস্ট প্রকাশ করতে বাধা দিয়েছে, কারণ সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল।
এছাড়া, গত বছর বেন অ্যান্ড জেরি’স, ইউনিলিভারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে।
যেখানে তারা ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সমর্থন এবং ইসরায়েলের প্রতি সামরিক সহায়তা বন্ধের প্রস্তাবের সমর্থনে তাদের বিবৃতিগুলো সেন্সর করার অভিযোগ এনেছিল।
তবে ইউনিলিভার বরাবরই এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন