ব্রিটিশ কবি, নাট্যকার, সঙ্গীতশিল্পী এবং সমাজকর্মী বেঞ্জামিন জেফানিয়া আর নেই। গত বছর ডিসেম্বরে তাঁর প্রয়াণ হয়, কিন্তু তাঁর কাজ আজও বিশ্বজুড়ে মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলে চলেছে।
সম্প্রতি তাঁর ৬৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ব্রুনেল ইউনিভার্সিটিতে ‘বেঞ্জামিন জেফানিয়া দিবস’ পালন করা হয়। জেফানিয়ার কাজের একটি দিক, যা অনেক সময় আলোচনার বাইরে থেকে যায়, সেটি হলো সঙ্গীতের প্রতি তাঁর অবদান।
জেফানিয়া মূলত ডাব পোয়েট্রি ঘরানা থেকে উঠে এসেছিলেন। তাঁর কবিতায় সমাজের প্রতি বঞ্চনা, বর্ণবাদ এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে দেখা যায়।
তিনি তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্তভাবে তুলে ধরতেন। তাঁর অ্যালবামগুলো, যেমন ‘রাস্তা’, রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কবিতা এবং ডাব রিদম ও স্টুডিওর বিভিন্ন ইফেক্ট দিয়ে তৈরি করা হতো।
এই কাজগুলো ইউকে-র ‘ট্রিপ-হপ’, ‘জঙ্গল’ এবং ‘ডাবস্টেপ’-এর মতো ধারার সঙ্গীতের জন্য সাংস্কৃতিক ভিত্তি তৈরি করে।
জেফানিয়া বিভিন্ন সময়ে ইলেকট্রনিক মিউজিকের সঙ্গে কাজ করেছেন। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ এবং সেই সময়ের অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন তাঁর সঙ্গে কাজ করা শিল্পীরা।
শিল্পী ন্যাট্টির মতে, বেঞ্জামিন ছিলেন তাঁর কাছে একজন বড় ভাইয়ের মতো। দু’জনের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফোনে কথা হতো।
ন্যাট্টির একটি প্রোজেক্টে কাজ করার জন্য তিনি যখন জেফানিয়াকে প্রস্তাব দেন, তিনি সঙ্গে সঙ্গেই রাজি হয়ে যান। তাঁরা লন্ডনের আকালার স্টুডিওতে গানটি রেকর্ড করেন।
জেফানিয়া তাঁর জীবনে ঘটা বিভিন্ন ঘটনা, বিশেষ করে এমবিই (MBE – Member of the Order of the British Empire) প্রত্যাখ্যান করার কারণগুলোও তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করতেন।
নাট্টির কথায়, গানটি মূলত ‘ব্যাডম্যান’ (রাস্তাফারি মিক্স) ট্র্যাকের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু পরে যখন মালা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন, তখন ডাবস্টেপ প্রযোজক হিসেবে মালাকে সেই গানটি পাঠানো হয়।
এমন শক্তিশালী কণ্ঠের সঙ্গে কাজ করাটা অন্যরকম ছিল। তাঁদের কথা আমার সৃজনশীলতাকে আরও গভীরতা দিয়েছে। বেঞ্জামিনের কথাগুলো সবসময় আমাদের সত্যের পথে অবিচল থাকতে এবং হৃদয় ও আত্মার উন্নতি করতে উৎসাহিত করে। স্যার, আপনি শান্তিতে থাকুন, আমরা আপনাকে স্যালুট জানাই।”
ন্যাট্টি তাঁর বন্ধুর স্মৃতি হিসেবে এখনও লাইভ শো-তে গানটি পরিবেশন করেন।
জেফানিয়ার প্রয়াণের পর তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২০২১ সালে মোবি ‘হোয়্যার ইজ ইউর প্রাইড?’ শিরোনামে একটি গান তৈরি করেন। মোবি জানান, “বেঞ্জামিন একজন জ্ঞানী ও সহানুভূতিশীল মানুষ ছিলেন, যিনি বহু বছর ধরে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। আমি আশা করি, এই গানটি তাঁর কাজ, জীবন এবং আদর্শের প্রতি সম্মান জানাবে।”
২০২৩ সালের গ্রীষ্মে, বার্মিংহামের শিল্পী কোফি স্টোন এবং জেফানিয়া একসঙ্গে কাজ করেন। এটি ছিল জেফানিয়ার করা শেষ কাজগুলোর মধ্যে একটি।
এই গানের মাধ্যমে জেফানিয়া, কোফি স্টোনকে বার্মিংহামে বেড়ে ওঠা এবং দারিদ্র্য ও বর্ণবাদের সঙ্গে লড়াই করার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। কোফি স্টোন জানান, “এই অভিজ্ঞতা আমি কখনোই ভুলতে পারব না।”
জেফানিয়ার কাজের গভীরতা এবং সমাজের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা সঙ্গীতপ্রেমীদের আজও আলোড়িত করে। তাঁর সৃষ্টিশীলতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকার, বিশেষ করে আজকের দিনে, বাংলাদেশের শিল্পী এবং শ্রোতাদের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান