বিলাসবহুল বিমানে চড়ার অভিজ্ঞতা! কম খরচে প্রাইভেট জেটের স্বাদ?

নতুন এক ধরনের বিমান সংস্থা, যা শুধু ব্যবসা শ্রেণির যাত্রী পরিবহনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছে, তাদের মধ্যে ‘বিওন্ড’ অন্যতম। বিলাসবহুল ভ্রমণের ধারণাটিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে, সীমিত সংখ্যক গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে এই বিমান সংস্থা।

তারা তাদের যাত্রীদের জন্য একটি আধা-প্রাইভেট জেট-এর মতো অভিজ্ঞতা সরবরাহ করতে চাইছে, যা প্রচলিত বিজনেস ক্লাসের থেকে কিছুটা বেশি কিন্তু প্রাইভেট জেটের আকাশছোঁয়া দামের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী।

বিওন্ড-এর যাত্রা শুরু হয় ২০২৩ সালের শেষের দিকে, মালদ্বীপ থেকে দুবাই, জুরিখ, মিউনিখ, মিলান এবং রিয়াদের মধ্যে বিমান চলাচলের মাধ্যমে। খুব শীঘ্রই জেদ্দা, আবুধাবি এবং ব্যাংকক-এর মতো শহরগুলিকেও তাদের গন্তব্যের তালিকায় যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

২০২৮ সালের মধ্যে তাদের বহরে ২৫টি বিমান যুক্ত করার এবং ৪৯টি গন্তব্যে পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে তারা কাজ করছে।

এই বিমানের টিকিটের দাম শুরু হয় প্রায় ৩,০০০ মার্কিন ডলার থেকে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩,৩০,০০০ টাকার সমান (ডলারের দামের উপর নির্ভরশীল)। সাধারণত, এমিরেটসের মতো প্রতিষ্ঠিত এয়ারলাইন্সের বিজনেস ক্লাসের টিকিটের দাম দুবাই-মালে রুটে ২,০০০ থেকে ৩,৫০০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে, যেখানে প্রথম শ্রেণির টিকিটের দাম শুরু হয় ৬,০০০ ডলার থেকে।

তাহলে, বিওন্ড-এর এই বিশেষ ক্লাসের অভিজ্ঞতা কি সত্যিই তাদের দাবির যোগ্য? একজন যাত্রী হিসেবে বিওন্ড-এর দুবাই-মালে রুটে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হলো।

চেক-ইন প্রক্রিয়াটি ছিল বেশ মসৃণ। দুবাইয়ের আল মাকতুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিওন্ড-এর জন্য আলাদা চেক-ইন কাউন্টার রয়েছে, যেখানে কর্মীদের দ্রুত এবং আন্তরিক পরিষেবা পাওয়া যায়।

যারা বেশি ওজনের জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ করেন, তাদের জন্য বিওন্ড-এর ‘ব্লিস’ টিকিটে ৪০ কেজি ওজনের এবং ১০ কেজি ওজনের হ্যান্ড লাগেজের সুবিধা রয়েছে। অন্যদিকে, ‘ওপুлен্স’ শ্রেণীর টিকিটে এই সীমা যথাক্রমে ৬০ কেজি এবং ১৫ কেজি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

নিরাপত্তা এবং ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়াও ছিল খুবই সহজ।

বিমানবন্দরের লাউঞ্জে অন্যান্য এয়ারলাইন্সের বিজনেস ক্লাসের যাত্রীদের সঙ্গে বিওন্ড-এর যাত্রীদেরও জায়গা হয়। এখানে বসার জন্য পর্যাপ্ত স্থান ছিল এবং বিনামূল্যে ওয়াইফাই ব্যবহারের সুযোগ ছিল।

যদিও লাউঞ্জটি পরিপাটি ছিল, তবে বিওন্ড-এর দেওয়া বিশেষ অভিজ্ঞতার সঙ্গে এর মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভবিষ্যতে দুবাইতে নিজস্ব লাউঞ্জ এবং মালদ্বীপে একটি বিশেষ স্থান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানা গেছে।

বিওন্ড-এর বিমানগুলো এয়ারবাস এ319 মডেলের, যা আগে ব্রিটিশ বাজেট এয়ারলাইন্স ইজিজেট-এর বহরে ছিল। বিমানের বাইরের উজ্জ্বল কমলা রং পরিবর্তন করে কালো করা হয়েছে এবং ইতালীয় ডিজাইন হাউস পলট্রোনা ফ্রাউ-এর ডিজাইন করা চামড়ার সিট ও অভ্যন্তরীণ সজ্জা এটিকে একটি আধুনিক রূপ দিয়েছে।

বিমানের বিজনেস ক্লাসের প্রতিটি সিট ২-২ বিন্যাসে সাজানো, যার প্রতিটির প্রস্থ ২০ ইঞ্চি এবং গভীরতা ৫০ ইঞ্চি। আরামদায়ক বসার ব্যবস্থা, নরম চামড়ার আচ্ছাদন এবং উষ্ণ কম্বল যাত্রীদের জন্য একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা তৈরি করে।

সিটের নকশা যাত্রীদের জন্য ব্যক্তিগত স্থান তৈরি করে, যা একটি প্রাইভেট জেটের অনুভূতি দেয়। প্রতিটি সিটে পাওয়ার সকেট এবং ইউএসবি চার্জিং পোর্ট রয়েছে।

বিনোদনের জন্য আইপ্যাড-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন চলচ্চিত্র, টিভি শো এবং গান উপভোগ করা যায়।

ভ্রমণের সময় খাবার পরিবেশন করা হয়, যেখানে বিভিন্ন ধরনের হালকা ও সুস্বাদু খাবার থাকে। প্রাতরাশের মেনুতে ছিল গরম পেস্ট্রি, বিভিন্ন ধরনের মাংস ও সালাদ।

পানীয়ের মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধরনের জুস, কফি এবং অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়।

বর্তমানে, বিওন্ড-এ ওয়াইফাই-এর সুবিধা নেই, যা কিছু যাত্রীর জন্য হতাশাজনক হতে পারে। তবে, বিমানের কর্মীদের আন্তরিক ব্যবহার এবং ব্যক্তিগত পরিষেবার কারণে এই অভাবটি কিছুটা হলেও পূরণ করা যায়।

বিওন্ড বর্তমানে একটি নতুন এয়ারলাইন্স এবং তাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে, যারা একটি বিশেষ এবং ব্যক্তিগত ভ্রমণের অভিজ্ঞতা চান, তাদের জন্য এটি একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হতে পারে।

ভবিষ্যতে এই বিমান সংস্থাটি আরও উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যদিও বর্তমানে বিওন্ড সরাসরি বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করে না, তবে ভবিষ্যতে মালদ্বীপ বা দুবাই হয়ে ব্যবসার উদ্দেশ্যে যারা ভ্রমণ করেন তাদের জন্য এই ধরনের প্রিমিয়াম এয়ারলাইন্স একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হতে পারে।

তথ্য সূত্র: ট্রাভেল এন্ড লেজার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *