বার্লিনের সবুজ অঙ্গনে দাঁড়িয়ে থাকা এক প্রাচীন বৃক্ষ, যার বয়স পাঁচ-ছয়শো বছর, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে আজ অস্তিত্বের সংকটে। জার্মানির রাজধানী বার্লিনের টেগেল অরণ্যে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক ওক গাছটির নাম ‘ডিকে মারি’ (আক্ষরিক অর্থে ‘মোটা মারি’)।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, একটানা খরা এবং জলীয় বাষ্পের অভাবে গাছটির স্বাস্থ্যহানি ঘটছে।
টেগেল বন বিভাগের প্রধান মার্ক ফ্রানুশ জানিয়েছেন, “আমরা আশা করি, ‘ডিকে মারি’ আরও কয়েক দশক বা শতাব্দী ধরে আমাদের মাঝে টিকে থাকবে।
তিনি আরও যোগ করেন, গাছটির বয়স বিবেচনায় এর কাঠ ছাঁটাই করা সম্ভব নয়।
“আমরা গাছটিকে স্থিতিশীল রাখতে এবং এর জীবনীশক্তি টিকিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
গাছটি প্রায় ১৮.৫ মিটার উঁচু এবং এর গুঁড়ির ব্যাস প্রায় ২ মিটার।
ঐতিহাসিক দিক থেকে ‘ডিকে মারি’ বার্লিনের মানুষের কাছে সবসময়ই প্রিয় একটি স্থান ছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বার্লিন যখন দ্বিধাবিভক্ত ছিল, তখন এই সংরক্ষিত বনগুলো ছিল পশ্চিম বার্লিনের মানুষের জন্য শান্তির আশ্রয়স্থল।
কিন্তু বর্তমানে, লেক টেগেলের উত্তরে এর নির্জন অবস্থান এবং অন্যান্য গাছের কারণে সূর্যের আলো থেকে বঞ্চিত হওয়ায় আগের মতো এখন আর তেমন ভিড় দেখা যায় না।
তবে, ‘ডিকে মারি’ এখনো জার্মান ডেন্ড্রোলজিক্যাল সোসাইটি কর্তৃক ২০২১ সালে ‘ন্যাশনাল হেরিটেজ ট্রি’র মর্যাদা লাভ করেছে।
গাছের এমন দীর্ঘ জীবনকালের কারণ হিসেবে এর লেকের কাছাকাছি অবস্থানকে বিবেচনা করা হতো, যা খরাতেও প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা জুগিয়ে যেত।
কিন্তু বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এখানকার শুষ্ক পরিস্থিতি গাছটির জন্য মারাত্মক হয়ে উঠেছে।
জার্মান আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ মাস ছিল জার্মানির ইতিহাসে সবচেয়ে শুষ্ক মাস।
এপ্রিল মাসেও পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি।
বার্লিনের আশেপাশে অবস্থিত ব্রান্ডেনবার্গ রাজ্যে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে স্বাভাবিকের তুলনায় মাত্র ১০-২০ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়েছে।
স্থানীয় এক বন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শুষ্ক পরিস্থিতির কারণে অনেক ইস্টার উৎসবের বনভোজন বাতিল করতে হয়েছে, যা সাধারণত খারাপ শীতের আত্মা দূর করতে পালন করা হয়।
ধারণা করা হয়, ‘ডিকে মারি’ নামটি এসেছে হামবোল্ট ভাইদের কাছ থেকে।
তারা তাদের প্রিয় পাচক এর নামে গাছটির নামকরণ করেন।
হামবোল্ট ভাইয়েরা বার্লিনের ‘সবচেয়ে মোটা’ আরেকটি ওক গাছের নামকরণ করেছিলেন, যার বয়স প্রায় ৩৫০ বছর এবং পরিধি প্রায় ৮ মিটার।
জার্মানিতে এমন প্রায় ১০০টি গাছ আছে, যেগুলোর বয়স ৪০০ বছরের বেশি।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মতো বাংলাদেশের পরিবেশেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো আমাদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
তাই, এই ধরনের ঐতিহাসিক গাছ রক্ষা করা এবং পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান