ইউরোপের ‘আনন্দনগরী’ : বার্লিনের রাতে কেন বদলাচ্ছে উন্মাদনা?

বার্লিনের নাইটলাইফ: নতুন প্রজন্মের পছন্দে পরিবর্তনের ঢেউ। ইউরোপের একসময়ের আনন্দ-উচ্ছ্বাসের কেন্দ্র ছিল বার্লিন।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেখানেও লেগেছে পরিবর্তনের হাওয়া। জার্মানির এই প্রাণবন্ত শহরে, বিশেষ করে রাতের জীবনের ধরনে আসছে নতুনত্ব।

তরুণ প্রজন্মের রুচি এবং চাহিদার পরিবর্তনের কারণে ঐতিহ্যবাহী নাইটক্লাবগুলো হারাচ্ছে জৌলুস, সেখানে জায়গা করে নিচ্ছে ভিন্ন ধারার আয়োজন।

নব্বইয়ের দশকে বার্লিনের দেয়াল ভাঙার পর শহরটিতে এক ভিন্ন ধরনের সংস্কৃতির উন্মেষ ঘটেছিল। পরিত্যক্ত শিল্পকারখানা আর নদীর ধারে থাকা গুদামগুলোতে চলতো গোপন রাতের পার্টি।

কিন্তু এখন, সেই উন্মুক্ত, উচ্ছৃঙ্খল পরিবেশ ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে। একদিকে যেমন বাড়ছে জীবনযাত্রার খরচ, তেমনি অন্যদিকে, নতুন প্রজন্মের সদস্যরা চাইছে আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ বিনোদন।

বার্লিনের নাইটলাইফের এই পরিবর্তনকে “ক্লাবস্টারবেন” বা “ক্লাবের মৃত্যু” নামে অভিহিত করা হচ্ছে।

একদিকে যেমন ঐতিহ্যবাহী অনেক ক্লাব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তেমনি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে ছোট ছোট, কমিউনিটি-ভিত্তিক অনুষ্ঠানগুলো।

পুরনো দিনের “টেকনো” (Techno) গানের উন্মাদনা এখন কিছুটা ফিকে হয়েছে, সেই জায়গায় জায়গা করে নিচ্ছে “আফ্রোবিট” (Afrobeat) বা “আরব ইলেক্ট্রনিক”-এর মতো ভিন্ন ধারার সঙ্গীত।

উদাহরণস্বরূপ, বার্লিনের বিখ্যাত “বের্গেইন” (Berghain) ক্লাবের কথা ধরা যাক।

একসময়, গভীর রাত পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, কঠোর পোশাকবিধি এবং বাউন্সারদের (bouncer) কড়া শাসনের কারণে এই ক্লাবটি ছিল অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো।

কিন্তু এখনকার তরুণ প্রজন্ম, যারা কোভিড-১৯ মহামারীর সময় রাতের জীবনের স্বাদ পায়নি, তারা হয়তো সেই কঠোর নিয়মের পরিবর্তে একটু বেশি স্বাচ্ছন্দ্য এবং উন্মুক্ত পরিবেশ চাইছে।

বার্লিনের ক্লাব সংস্কৃতির এই পরিবর্তনের পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যাওয়ায়, ক্লাবগুলোতে প্রবেশ এবং পানীয়ের দামও বেড়েছে, যা তরুণদের জন্য একটি বড় সমস্যা।

অনেক তরুণ এখন স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার দিকে ঝুঁকছে, যার কারণে তারা আগের মতো নাইটক্লাবে সময় কাটানো কমিয়ে দিয়েছে।

তবে, বার্লিনের নাইটলাইফ এখনও তার আকর্ষণ ধরে রেখেছে। বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীত এবং সংস্কৃতির সংমিশ্রণে এখানকার রাতের জীবন আজও অনেক মানুষের কাছে প্রিয় গন্তব্য।

বর্তমানে, বিভিন্ন ধরনের ইভেন্ট আয়োজকরা এই সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করছেন, যা নতুন প্রজন্মের কাছে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলছে।

এই পরিবর্তনের একটি বড় দিক হলো, বিভিন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ স্থান তৈরি করা। অনেক নতুন সংগঠন (collective) এখন তাদের ইভেন্টগুলোতে নারী, এলজিবিটিকিউ+ (LGBTQ+) এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষের জন্য জায়গা করে দিচ্ছে।

তাদের অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, আলোচনা সভা এবং লাইভ পারফর্মেন্সের মতো বিভিন্ন ধরনের আয়োজন থাকে, যা শুধু নাচের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।

বার্লিনের নাইটলাইফের এই পরিবর্তন প্রমাণ করে যে সংস্কৃতি সবসময়ই পরিবর্তনশীল। নতুন প্রজন্মের রুচি, চাহিদা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে এখানকার রাতের জীবনও নতুন রূপ নিচ্ছে।

পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো হয়তো থাকবে, তবে ভবিষ্যতের বার্লিন নাইটলাইফ যে আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *