মধ্যযুগীয় ধারায় ভেষজ বিপ্লব: বার্লিনের বাগানে স্বাস্থ্যের সন্ধান!

বার্লিনের একান্তে গড়ে ওঠা একটি বাগান, যেখানে ভেষজ উদ্ভিদের সমাহার, ফিরিয়ে আনছে মধ্যযুগের সন্ন্যাসীদের স্বাস্থ্যচর্চার ঐতিহ্য। মার্তিন রোটজেল নামের এক ব্যক্তি এই অভিনব উদ্যোগের মাধ্যমে জার্মানির রাজধানী বার্লিনের উপকণ্ঠে গড়ে তুলেছেন ‘মঙ্ক গার্ডেন’ বা ‘সন্ন্যাসী বাগান’।

বার্লিনের মারিয়েনফেল্ডে, পুরনো একটি গ্যাস কারখানার পাশে প্রায় ২,০০০ বর্গমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই বাগানে রয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ রকমের ভেষজ গাছ। রোটজেলের এই বাগানটি যেন এক ভিন্ন জগৎ, যেখানে জার্মানির সাধারণ বাজারগুলোতে সহজে পাওয়া যায় না এমন অনেক ভেষজ উদ্ভিদের দেখা মেলে।

নানান ধরনের পুদিনা, ওরিগানো, ধনে পাতা, ইয়োশপ, নিউ জিল্যান্ডের পালং শাক, চার পাতার সরিষা, এবং স্থানীয় প্রজাতির ট্যারগন সহ আরও কত কি!

২০২২ সাল থেকে রোটজেল এই বাগানটিকে একটি ব্যবসায়িক রূপ দিয়েছেন। তাঁর বাগানের প্রধান আকর্ষণ হলো এখানকার ভেষজ উপাদান সমৃদ্ধ খাবার, যা বিশেষভাবে তৈরি করা হয় নামকরা রেস্টুরেন্টগুলোর জন্য।

এছাড়াও, তিনি এখানে ‘বন্য ভেষজ উদ্ভিদ ভ্রমণ’ এবং কর্মশালারও আয়োজন করেন, যেখানে মানুষজন এই গাছপালা থেকে কীভাবে ত্বকের ক্রিম, ওয়াইন এবং অন্যান্য জিনিস তৈরি করতে পারে, সেই বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়।

রোটজেলের কথায়, একসময় এই ভেষজ জ্ঞানের অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছিল, যার প্রধান কারণ ছিল খাদ্য-শিল্পের বিস্তার। তাঁর মতে, এখনকার দিনে শতকরা ৯৯ শতাংশ মানুষ একটি গাছের নামও বলতে পারে না।

সেই হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতেই রোটজেলের এই প্রচেষ্টা।

ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে গাছপালার জ্ঞান অর্জন করা রোটজেল একসময় পেশাগত জীবনে হোটেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে নাচের প্রতিও আকৃষ্ট হন তিনি।

১৩ বছর আগে অসুস্থ হয়ে পড়ার পর ভেষজ চিকিৎসার প্রতি তাঁর আগ্রহ বাড়ে। তিনি মনে করেন, এই ভেষজ উপাদানগুলো তাঁকে সুস্থ করে তুলতে সাহায্য করেছে।

এই বাগানে মাঝে মাঝে বিশেষ ভোজনসভারও আয়োজন করা হয়। যেখানে আগত অতিথিদের জন্য পরিবেশন করা হয় বিভিন্ন ভেষজ উপাদান দিয়ে তৈরি খাবার।

প্রত্যেকটি পদের সঙ্গে থাকে এক একটি ভেষজ চা। একবার এক ভোজন-অনুষ্ঠানে আগত ব্রিতা রোজেনথাল নামের একজন জানান, তিনি এই ভেষজ উপাদানগুলি থেকে “কী পাওয়া যেতে পারে” তা জানতে চান এবং “গোলমরিচ, নুন আর মশলার বাইরে গিয়ে সবুজ, সতেজ কিছু দিয়ে খাবার তৈরি করতে আরও সাহসী হতে চান।”

রোটজেল মনে করেন, পুরোনো দিনের সেই স্বাদ ফিরিয়ে আনা তাঁর অন্যতম প্রধান আনন্দ। তাঁর কথায়, “অনেক মানুষ, বিশেষ করে বয়স্ক প্রজন্মের লোকেরা এমন কিছু জিনিসের সঙ্গে পরিচিত, যা আজকাল আর দেখা যায় না।

যখন দেখি কেউ সেই পুরনো দিনের স্মৃতি মনে করে, তখন ভালো লাগে।”

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *