ধ্বংসস্তূপে ঢাকা বার্লিন: ৮০ বছর পরও কি ভোলেনি সেই বিভীষিকা?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি আজও বহন করে বার্লিন: নাৎসি জার্মানির পরাজয়ের ৮০ বছর পর।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটিয়েছিল যে ধ্বংসযজ্ঞ, তার সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে জার্মানির রাজধানী বার্লিন। ১৯৪৫ সালের মে মাসে মিত্রশক্তির কাছে নাৎসি জার্মানির আত্মসমর্পণের মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান হয়, কিন্তু শহরের বুকে রয়ে গেছে সেই বিভীষিকার ছাপ।

বোমার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত দেয়াল, গুলির চিহ্ন আজও জানান দেয় এক সময়ের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা।

১৯৪৫ সালের মে মাসের শুরুতে, সোভিয়েত লাল ফৌজ বার্লিনের কেন্দ্রস্থলে আক্রমণ চালায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা এই লড়াইয়ে শহরের প্রায় পুরোটাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

তৎকালীন একটি সংবাদ প্রতিবেদনে শহরটিকে ‘মৃতদের শহর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। হিটলারের ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল বার্লিন ছিল মিত্রশক্তির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।

যুদ্ধকালীন সময়ে বার্লিনের বাসিন্দাদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা আজও শোনা যায়। ৮৯ বছর বয়সী ইভা-মারিয়া কোলব-এর ভাষায়, “যুদ্ধের শেষ ছয় মাসে একটানা বোমাবর্ষণ চলত। সবসময় আমাদের বাড়ির কাছে থাকা আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটতে হত।”

১৯৪৫ সালের ৩০শে এপ্রিল, হিটলার আত্মহনন করেন এবং ২রা মে বার্লিনের জার্মান সামরিক কমান্ডার জেনারেল হেলমুথ ওয়েইডলিং সোভিয়েত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।

এর কয়েক দিন পরেই জার্মানির আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

যুদ্ধের পর বার্লিনকে মিত্রশক্তির মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়, যা শীতল যুদ্ধের বিভাজনকে আরও দৃঢ় করে তোলে। এর ফলস্বরূপ, ১৯৪৯ সালে দুটি আলাদা জার্মান রাষ্ট্র গঠিত হয় এবং ১৯৬১ সালে বার্লিন প্রাচীর নির্মিত হয়।

এই প্রাচীর ছিল ঠান্ডা যুদ্ধের প্রতীক, যা ২৮ বছর পর ভেঙে দেওয়া হয়।

১৯৯০ সালে জার্মানির একত্রীকরণ হয় এবং ১৯৯৯ সালে রাজধানী পুনরায় বার্লিনে স্থানান্তরিত করা হয়।

বর্তমানে, জার্মান পার্লামেন্ট রাইখস্টাগ-এ বসে, যেখানে ১৯৪৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের লাল পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল, যা নাৎসি জার্মানির ওপর বিজয়ের প্রতীক।

বার্লিনের কার্লহর্স্ট জাদুঘরে (Museum Berlin-Karlshorst) সংরক্ষিত আছে সেই হলঘর, যেখানে জার্মানির আত্মসমর্পণের দলিল স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

যুদ্ধের স্মৃতি আজও বহন করা এই শহর, শান্তি ও ঐক্যের বার্তা দিয়ে যায় বিশ্বকে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *