বার্নি স্যান্ডার্সের ‘প্রতিরোধের বার্তা’: ডেমোক্রেটিক পার্টির নতুন দিশা?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্রেটিক পার্টি যখন নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে, তখন দেশটির রাজনীতিতে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন বার্নি স্যান্ডার্স। এই স্বতন্ত্র সিনেটর, যিনি নিজেকে ডেমোক্রেটিক সমাজতন্ত্রী হিসেবে পরিচয় দেন, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তার এই ‘প্রতিরোধের বার্তা’ ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে নতুন করে প্রাণ সঞ্চার করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ডেমোক্রেটদের মধ্যে ঐক্যের অভাব দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, বার্নি স্যান্ডার্সের পরিচিত কণ্ঠস্বর যেন নতুন করে শোনা যাচ্ছে। ২০১৬ এবং ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন। বর্তমানে, তিনি বিভিন্ন রাজ্যে সমাবেশ করছেন, যেখানে ট্রাম্প প্রশাসন এবং ধনী ব্যক্তিদের প্রতি তার কড়া সমালোচনা শোনা যাচ্ছে।
বার্নি স্যান্ডার্স ‘ফাইটিং অলিগার্কি’ নামে একটি সফর শুরু করেছেন। এই সফরে ক্যালিফোর্নিয়া, ইউটাহ এবং আইডাহোর মতো রাজ্যগুলোতে তার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিনি প্রায়ই ‘বিলিয়নেয়ার শ্রেণি’র বিরুদ্ধে কথা বলেন এবং তাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের সমালোচনা করেন। এই সফরে তার সাথে যোগ দিচ্ছেন নিউ ইয়র্কের কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজসহ আরো অনেকে। তাদের এই কার্যক্রম ট্রাম্প প্রশাসন এবং প্রভাবশালী কর্পোরেট কর্মকর্তাদের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ।
স্যান্ডার্সের এই ধরনের রাজনৈতিক কৌশল অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। মিনেসোটা রাজ্যের গভর্নর টিম ওয়ালজ-সহ ডেমোক্রেটিক পার্টির অনেক নেতাও এখন বিভিন্ন শহরে টাউন হল মিটিং করছেন, যেখানে তারা সাধারণ মানুষের কথা শুনছেন। যদিও কেউ কেউ মনে করেন, স্যান্ডার্সের এই ধরনের কঠোর অবস্থান মধ্যপন্থী ভোটারদের দূরে সরিয়ে দিতে পারে। তাদের মতে, যারা আগে জো বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলেন, তাদের কাছে এই বার্তা খুব একটা গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ম্যাট বেনেট মনে করেন, স্যান্ডার্সের ‘ধনী বিরোধী’ বার্তা সেই ভোটারদের আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, যাদের ডেমোক্রেটদের পুনরায় জেতার জন্য প্রয়োজন। বেনেটের মতে, “শ্রমজীবী মানুষ ধনী হওয়ার কারণে কারো উপর রেগে নেই, বরং তারা এমন কিছু পরিবর্তনের বিরোধিতা করছেন যা তাদের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করতে পারে।
তবে, বার্নি স্যান্ডার্স একাই নন, যিনি ট্রাম্প প্রশাসনের নীতির সমালোচনা করছেন। ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিৎজকার এবং ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের মতো ডেমোক্রেটিক নেতারাও বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের মতামত প্রকাশ করছেন। তারা ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাবমূর্তি পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন।
বার্নি স্যান্ডার্সের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সমাজের ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য নিয়ে কথা বলছেন। তার মতে, সমাজের শীর্ষস্থানীয় ধনী ব্যক্তিরা দেশের নীতি নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করে। এই বিষয়ে তিনি প্রায়ই সতর্ক করেন। তার সমর্থকরা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে, যখন বিভিন্ন কর্পোরেট কর্তা সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন, তখন স্যান্ডার্সের এই সতর্কবার্তা আরও বেশি প্রাসঙ্গিক।
স্যান্ডার্সের উপদেষ্টাদের মতে, তার সমাবেশের মূল আকর্ষণ হলো শ্রেণিগত বিভাজনকে কেন্দ্র করে আলোচনা করা। তাদের মতে, এই আলোচনা বাম বা ডানপন্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সকলের কাছে পৌঁছানো যায়।
বার্নি স্যান্ডার্সের এই সফর এমন একটি সময়ে হচ্ছে, যখন ডেমোক্রেটিক পার্টির মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে কতটা কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, তা নিয়ে বিতর্ক চলছে। অনেক রাজ্যে তার এই সফর রিপাবলিকানদের শক্ত ঘাঁটিতে আঘাত হানার চেষ্টা করছে। উদাহরণস্বরূপ, তিনি নেব্রাস্কার ২য় কংগ্রেসনাল ডিস্ট্রিক্টে সমাবেশ করেছেন, যেখানে উভয় দলের সমর্থন রয়েছে।
নেব্রাস্কা ডেমোক্রেটিক পার্টির নির্বাহী পরিচালক প্রিসিয়াস ম্যাককেসন জানিয়েছেন, তারা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পাঁচটি টাউন হল মিটিংয়ের আয়োজন করবেন। যেখানে ভোটারদের কথা শোনা হবে এবং তাদের উদ্বেগের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হবে।
স্যান্ডার্সের সমর্থক উইলিয়াম কক্স মনে করেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সকলের প্রতিবাদ করা উচিত। তিনি বলেন, “যদি পরিস্থিতি এমনই চলতে থাকে, তবে সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে।
উটাহ থেকে আসা ব্রায়ানা রাসমুসেন নামের একজন তরুণী জানান, তিনি স্বাস্থ্যসেবা এবং মহিলাদের অধিকার সহ বিভিন্ন বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি মনে করেন, স্যান্ডার্স এবং ওকাসিও-কর্টেজের মতো নেতারা অন্তত কিছু একটা করছেন এবং জনগণের সমস্যাগুলো তুলে ধরছেন।
তথ্যসূত্র: সিএনএন