জার্মানিতে উদ্ভাবনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন বারথা বেঞ্জ। তিনি ছিলেন কার্ল বেঞ্জের স্ত্রী, যিনি পরবর্তীতে মার্সিডিজ-বেঞ্জ (Mercedes-Benz) গাড়ির উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত হন।
উনিশ শতকের শেষ দিকে, যখন মোটরগাড়ি তখনও মানুষের কাছে অপরিচিত ছিল, বারথা এক দুঃসাহসিক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
তখনকার সময়ে কার্ল বেঞ্জ তাঁর তৈরি করা গাড়ির ধারণা নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারছিলেন না। অনেকেই এই নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে সন্দিহান ছিলেন।
সেই সময় বারথা এগিয়ে আসেন এবং তাঁর স্বামীর তৈরি করা “প্যাটেন্ট মোটর কার”-এর (Patent Motor Car) নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য এক ঐতিহাসিক ভ্রমণে বের হন।
১৮৮৮ সালের আগস্ট মাসে, তিনি তাঁর দুই ছেলে ইউজিন ও রিচার্ডকে সঙ্গে নিয়ে মানহাইম (Mannheim) থেকে ফোরজহাইমের (Pforzheim) উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন।
এই যাত্রা মোটামোটি এক ঘণ্টার পথ ছিল, তবে সেই সময়ের রাস্তাঘাটের কথা চিন্তা করলে এটি ছিল বেশ কষ্টসাধ্য।
বারথা তাঁর স্বামীর অজান্তে এই ভ্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন, যা ছিল তাঁর দৃঢ়চেতা মনোভাবের পরিচায়ক। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, এই ভ্রমণের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মনে গাড়ির ব্যবহারযোগ্যতা সম্পর্কে ধারণা তৈরি করা সম্ভব হবে।
বারথার এই পদক্ষেপ কেবল একটি ভ্রমণ ছিল না, বরং এটি ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা।
এর মাধ্যমে মোটরগাড়ির ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হয় এবং কার্ল বেঞ্জের উদ্ভাবনী ক্ষমতা বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করে।
বারথার এই আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার ফলেই মার্সিডিজ-বেঞ্জ-এর মতো বিখ্যাত গাড়ির পথ চলা শুরু হয়েছিল।
বারথার এই সাহস ও উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা আজও নারী সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণা। তিনি প্রমাণ করেছেন, দৃঢ় ইচ্ছা থাকলে এবং সমাজের প্রচলিত ধ্যান-ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারলে, যেকোনো বাধা জয় করা সম্ভব।
তাঁর এই অবদান শুধু জার্মানির ইতিহাসে নয়, বরং বিশ্বজুড়ে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের কাছে অনুকরণীয়।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল এন্ড লেজার