বিশ্বজুড়ে সম্প্রতি চালু হওয়া সাতটি নতুন জাদুঘরের গল্প
নতুন বছরে ঘুরে আসার মতো বিশ্বের সাতটি অসাধারণ জাদুঘরের খবর নিয়ে আজকের এই প্রতিবেদন। সংস্কৃতি, ইতিহাস অথবা নিছক শিল্পকলার প্রতি যাদের আগ্রহ রয়েছে, তাদের জন্য এই জাদুঘরগুলো হতে পারে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের চাবিকাঠি।
আসুন, জেনে নেওয়া যাক এমনই সাতটি জাদুঘরের বিষয়ে, যা ইতোমধ্যে বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ প্রেমীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
১. গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম, মিশর
প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার এক বিশাল সংগ্রহ নিয়ে কায়রোর গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম (Grand Egyptian Museum) – বিশ্বের বৃহত্তম প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রায় এক দশক ধরে নির্মাণকাজ চলার পর অবশেষে এটি জনসাধারণের জন্য খোলা হয়েছে।
এখানে রয়েছে ১১ মিটার উঁচু, ৩২০০ বছরের পুরনো দ্বিতীয় রামেনেসিসের মূর্তি। তাছাড়াও, ফ্লোর থেকে সিলিং পর্যন্ত বিস্তৃত জানালা থেকে গিজার পিরামিডের দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
জাদুঘরের প্রধান আকর্ষণ হলো, রাজা তুতেনখামেনের সংগ্রহ। এখানে প্রতিদিন আরবি ও ইংরেজি ভাষায় ট্যুর অনুষ্ঠিত হয়, যা প্রায় ৯০ মিনিট স্থায়ী হয়।
২. স্টোনওয়াল ন্যাশনাল মনুমেন্ট ভিজিটর সেন্টার, যুক্তরাষ্ট্র
এলজিবিটিকিউ+ (LGBTQ+) সম্প্রদায়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে নিবেদিত নিউইয়র্ক সিটির স্টোনওয়াল ন্যাশনাল মনুমেন্ট ভিজিটর সেন্টার (Stonewall National Monument Visitor Centre) -এর যাত্রা শুরু হয় গত বছর, ২৬শে জুন। ১৯৬৯ সালে গ্রিনউইচ ভিলেজের একটি গে বার-এ পুলিশের অভিযানের প্রতিবাদে হওয়া বিক্ষোভের স্মৃতিস্বরূপ এই কেন্দ্রটি তৈরি করা হয়েছে।
এখানে এলজিবিটিকিউ+ ইতিহাসের ওপর বিভিন্ন আলোচনা, লাইভ পারফরম্যান্স এবং প্রদর্শনী নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়। এমনকি, পুরোনো দিনের একটি জুকবক্সও রয়েছে, যেখানে স্টোনওয়াল কমিউনিটির বিদ্রোহী চেতনা ও আনন্দের গানগুলো শোনা যায়।
এই কেন্দ্রে প্রবেশ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
৩. নিনতেনদো মিউজিয়াম, জাপান
জাপানের কিয়োটোতে অবস্থিত নিনতেনদো মিউজিয়াম (Nintendo Museum), গেমারদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ। জনপ্রিয় গেম প্রস্তুতকারক এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয় ১৮৮৯ সালে, ঐতিহ্যবাহী জাপানি খেলার কার্ড ‘হানাফুদা’ তৈরির মাধ্যমে।
জাদুঘরে নিনতেনদোর পুরনো দিনের গেম থেকে শুরু করে আধুনিক কনসোল পর্যন্ত, তাদের সমগ্র ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হলো, ইন্টারেক্টিভ গেমের সংগ্রহ, যেখানে ‘কার্বি’ থেকে ‘সুপার মারিও’-র মতো বিখ্যাত চরিত্রগুলো রয়েছে।
জাদুঘরের উপহার সামগ্রীর দোকান এবং ‘হ্যাটেনা বার্গার’ রেস্টুরেন্টেও রয়েছে বিশেষ আকর্ষণ। টিকিট পেতে হলে আগে থেকে লটারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আবেদন করতে হয়।
৪. কুন্সিলো, নরওয়ে
নরওয়ের নতুন সমসাময়িক নর্ডিক শিল্পের জাদুঘর ‘কুন্সিলো’ (Kunstsilo)। এটি তৈরি হয়েছে ১৯৩৫ সালে নির্মিত একটি পুরনো ময়দার মিলকে নতুন রূপ দিয়ে। এখানে প্রায় ৮,০০০ নর্ডিক শিল্পকর্ম রয়েছে।
‘টাংগেন কালেকশন’-এর (Tangen Collection) মতো উল্লেখযোগ্য সংগ্রহশালা এখানে স্থান পেয়েছে, যেখানে নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক এবং আইসল্যান্ডের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়।
জাদুঘরে ডিজিটাল আর্ট, বিভিন্ন প্রদর্শনী, বক্তৃতা, কনসার্ট এবং কর্মশালারও আয়োজন করা হয়। দর্শনার্থীদের জন্য এখানে একটি রেস্টুরেন্ট ও একটি বারও রয়েছে, যেখান থেকে সমুদ্র ও দ্বীপপুঞ্জের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
৫. উইমেন আর্টিস্টস অফ দ্য মুজিনস মিউজিয়াম, ফ্রান্স
ফ্রান্সের মুজিনসে অবস্থিত ‘উইমেন আর্টিস্টস অফ দ্য মুজিনস মিউজিয়াম’ (Women Artists of the Mougins Museum)। এখানে ১৯ থেকে ২১ শতকের নারী শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়।
এই জাদুঘরে ফ্রিদা কাহলো, ব্লাঞ্চ হোশেদে-মনে (ক্লদ মোনের সৎ কন্যা), জোয়ান মিচেল, জেনা গ্রিবন, লিওনোরা ক্যারিংটনসহ আরও অনেক শিল্পীর শতাধিক চিত্রকর্ম ও ভাস্কর্য রয়েছে। জাদুঘরের নিচতলায় ইমপ্রেশনিস্ট ও পরাবাস্তববাদী শিল্পীদের কাজ, প্রথম তলায় বিংশ শতাব্দীর বিমূর্ত শিল্প এবং দ্বিতীয় তলায় মানবদেহের বিভিন্ন রূপ ফুটিয়ে তোলা শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়।
৬. মিউজিয়াম অফ বিবিQ, যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস সিটিতে অবস্থিত ‘মিউজিয়াম অফ বিবিQ’ (Museum of BBQ)। খাদ্য লেখক ও বিবিQ বিচারক জোনাথন বেন্ডার-এর হাত ধরে এটির যাত্রা শুরু। এখানে কানসাস সিটি, মেমফিস, টেক্সাস এবং ক্যারোলিনার মতো আমেরিকার চারটি প্রধান বারবিকিউ অঞ্চলের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।
মাংস কাটা থেকে শুরু করে ধোঁয়া, কাঠ এবং আগুনের প্রভাব পর্যন্ত – বারবিকিউ তৈরির প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় এখানে।
৭. সাকা মিউজিয়াম, ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অবস্থিত সাকা মিউজিয়াম (Saka Museum) স্থানীয় বালীয় সংস্কৃতি ও ইতিহাসের প্রতি উৎসর্গীকৃত। হিন্দু সৌর ক্যালেন্ডারের নামে নামকরণ করা এই জাদুঘরে বালির প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
এখানে প্রাচীন পুঁথি, গামেলান বাদ্যযন্ত্র, পাথরের মূর্তি এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের ‘ওগোহ-ওগোহ’ (Ogoh-ogoh) ভাস্কর্য রয়েছে। এছাড়াও, এখানে বালির বার্ষিক নীরবতার দিন ‘নিয়েপি’ (Nyepi) সম্পর্কেও বিস্তারিত জানা যায়।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত এই জাদুঘরগুলো শুধু এক একটি সংগ্রহশালাই নয়, বরং বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ইতিহাসের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। আপনার পরবর্তী ভ্রমণে এই জাদুঘরগুলো ঘুরে আসতে পারেন, যা নিঃসন্দেহে আপনার অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ করবে।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক