ব্রিটিশ কলম্বিয়ার সেরা ৬টি রেল ভ্রমণ: মন জয় করা অভিজ্ঞতা!

ব্রিটিশ কলাম্বিয়া: ট্রেনের জানালায় প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য

কানাডার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত ব্রিটিশ কলাম্বিয়া (BC)। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে।

উঁচু পর্বতমালা, স্বচ্ছ হ্রদ আর সবুজ বনভূমি – প্রকৃতি যেন এখানে তার আপন মহিমায় বিরাজমান। আর এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ট্রেনে ভ্রমণ করা.

আসুন, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার কয়েকটি অসাধারণ রেল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

**রকি মাউন্টেনিয়ার: পশ্চিমাঞ্চলের প্রথম যাত্রা**

ভ্যাঙ্কুভার থেকে ব্যানফ পর্যন্ত এই রুটে ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। এটি সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর রেল ভ্রমণগুলোর মধ্যে একটি।

বরফের পাহাড়, হ্রদ, বন, গিরিখাত, নদী এবং হিমবাহের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায় এই ভ্রমণে। যাত্রাপথে বন্যপ্রাণী দেখারও সুযোগ থাকে।

বিলাসবহুল এই ট্রেনটিতে বসে ককটেল পান করতে করতে অথবা ডাইনিং কারে বসে রাতের খাবার উপভোগ করা যেতে পারে। এই রুটে ভ্রমণ করতে জনপ্রতি প্রায় ১,৩৮৯ পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১,৮৭,০০০ টাকা)।

**স্كينا: প্রকৃতির গভীরে**

প্রিন্স রুপার্ট থেকে জাস্পার পর্যন্ত বিস্তৃত স্كينا যাত্রা একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা। এটি প্রায় ১,১৬০ মাইল দীর্ঘ।

এই রুটে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল থেকে শুরু করে রকি পর্বতমালা পর্যন্ত ভ্রমণ করা যায়। স্كينا “রূপার্ট রকেট” নামেও পরিচিত।

সপ্তাহে তিন দিন এই রুটে ট্রেন চলাচল করে। পথে প্রিন্স জর্জ-এ একদিনের জন্য যাত্রাবিরতি থাকে। বনের ভেতর দিয়ে, খাড়া গিরিখাত এবং স্বচ্ছ হ্রদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়।

যারা ট্রেকিং এবং দুঃসাহসিক অভিযানে যেতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য এই যাত্রা দারুণ হতে পারে। এই রুটে জনপ্রতি প্রায় ৯১ কানাডীয় ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮,০০০ টাকা) খরচ হয়।

**কেটল ভ্যালি স্টিম রেলওয়ে: পুরনো দিনের স্মৃতি**

ফোল্ডার থেকে ট্রাউট ক্রিক পর্যন্ত এই ঐতিহাসিক রেলপথে ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে। এটি মূলত ১৯১০ থেকে ১৯১৬ সালের মধ্যে তৈরি করা হয়েছিল।

এই রুটে ওকানাগান উপত্যকার আঙ্গুর ক্ষেত এবং খামারগুলোর পাশ দিয়ে যাওয়া যায়। এখানে কানাডার সেরা কিছু ওয়াইন তৈরি হয়।

ভিনটেজ স্টিম লোকোমোটিভের সাথে খোলা বগির এই ট্রেনে চড়ে প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যেতে পারে। এই রুটে ভ্রমণ করতে জনপ্রতি প্রায় ৩৩ কানাডীয় ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩,০০০ টাকা) খরচ হয়।

**রকি মাউন্টেনিয়ার: রেইনফরেস্ট থেকে গোল্ড রাশ**

ভ্যাঙ্কুভার থেকে জাস্পার পর্যন্ত এই রুটে ভ্রমণ করলে আপনি একই সাথে পর্বত এবং সমুদ্র উপকূলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এই পথে হুইসলারের স্কি ঢাল এবং পুরনো কাঠের শহর কুইসনেলের পাশ দিয়ে যাওয়া যায়।

এরপর কারিবু মালভূমির স্বর্ণক্ষেত্রগুলির উপর দিয়ে ভ্রমণ করে জাস্পারে পৌঁছানো যায়। এই রুটে ভ্রমণ করতে জনপ্রতি প্রায় ৪,৯২৯ কানাডীয় ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪,40,000 টাকা) খরচ হয়।

**অ্যামট্রাক ক্যাসকেডস: যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার সংযোগ**

ভ্যাঙ্কুভার থেকে সিয়াটেল পর্যন্ত অ্যামট্রাক লাইনে ভ্রমণ করা যেতে পারে। এই রুটে আপনি একদিকে যেমন সুন্দর পাইন বন, স্বচ্ছ উপসাগর এবং আলপাইন তৃণভূমি দেখতে পাবেন, তেমনই ক্লাসিক কিছু পাহাড়ি শহরও আপনার দৃষ্টি কাড়বে।

এই রুটে ভ্রমণ করতে জনপ্রতি প্রায় ৩৪ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪,০০০ টাকা) খরচ হয়।

**আলবার্নি প্যাসিফিক রেলওয়ে: দ্বীপের স্মৃতিচিহ্ন**

পোর্ট আলবার্নিতে অবস্থিত এই রেলপথে ভ্যানকুভার দ্বীপের ঐতিহাসিক দৃশ্য দেখা যায়। একসময় এখানকার কাঠের শিল্প বেশ জনপ্রিয় ছিল।

বর্তমানে এই রুটে একটি স্টিম রেলওয়ে চালু রয়েছে। পুরনো দিনের বগিগুলো নিয়ে ১৯২৯ সালের একটি বাল্ডউইন লোকোমোটিভ এই পথে চলাচল করে।

আলবার্নি জলপথ এবং পাহাড়ের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করার জন্য এই যাত্রা করতে পারেন। এই রুটে ভ্রমণ করতে জনপ্রতি প্রায় ৮ কানাডীয় ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৭০০ টাকা) খরচ হয়।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার এই রেল ভ্রমণগুলো প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *