অবাক করা! রাতের আকাশে তারা দেখতে সেরা জায়গাগুলো!

রাতের আকাশে হারিয়ে যাওয়া নক্ষত্রদের খুঁজে ফেরা: উত্তর আমেরিকার কিছু সেরা স্থান। আকাশের দিকে তাকিয়ে নক্ষত্রদের আলোয় মুগ্ধ হওয়া মানুষের এক আদিম আকাঙ্ক্ষা।

যুগ যুগ ধরে মানুষ রাতের আকাশে তারাদের মিটিমিটি আলো দেখেছে, গল্প বুনেছে, খুঁজে ফিরেছে জীবনের অর্থ। আধুনিক যুগে অবশ্য আলোক দূষণের কারণে এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকে।

কিন্তু এখনো এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে রাতের আকাশ তার আসল রূপে ধরা দেয়, যেন এক মুগ্ধকর ক্যানভাস।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, উত্তর আমেরিকায় এমন কিছু স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে রাতের আকাশ দর্শনের সুযোগ রয়েছে।

‘ডার্কস্কাই ইন্টারন্যাশনাল’-এর মতে, এইসব স্থানগুলিতে রাতের আকাশ রক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই স্থানগুলি ‘ডার্ক স্কাই প্লেস’ হিসেবে পরিচিত।

আসুন, তেমনই কিছু জায়গার সঙ্গে পরিচিত হওয়া যাক।

আলো ঝলমলে পৃথিবীতে, রাতের আকাশ উপভোগ করা এখন কঠিন।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষই আলো দূষণের শিকার। রাতের আকাশ রক্ষার জন্য তাই ডার্কস্কাই ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

তারা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোতে প্রায় ১৭৩টি স্থানকে ‘ডার্ক স্কাই প্লেস’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই স্থানগুলোতে রাতের আকাশ পরিষ্কার দেখা যায়।

এই তালিকায় সবার উপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন অঙ্গরাজ্যের ‘আউটব্যাক’। এটি প্রায় ২৫ লাখ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত।

এখানে রয়েছে পাহাড়, উপত্যকা এবং লবণাক্ত হ্রদ। রাতের বেলা এখানকার আকাশে তারাদের আলো যেন হ্রদের জলে প্রতিবিম্বিত হয়, যা এক অসাধারণ দৃশ্য তৈরি করে।

এছাড়াও, যুক্তরাষ্ট্রের মেইন অঙ্গরাজ্যের ‘কাটাহদিন উডস অ্যান্ড ওয়াটার্স ন্যাশনাল মনুমেন্ট’, মিনেসোটার ‘বাউন্ডারি ওয়াটার্স ক্যানো এরিয়া ওয়াইল্ডারনেস’ এবং টেক্সাস ও মেক্সিকোর সীমান্তবর্তী ‘গ্রেটার বিগ বেন্ড ইন্টারন্যাশনাল ডার্ক স্কাই রিজার্ভ’-এর মতো স্থানগুলোতেও রাতের আকাশ দর্শনের সুযোগ রয়েছে।

ডার্ক স্কাই প্লেসগুলোর মধ্যে ‘স্যাকচুয়ারি’ স্থানগুলো সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

এখানে রাতের আকাশ রক্ষার জন্য কঠোর নিয়মকানুন মেনে চলা হয়। এইসব স্থানে রাতের বেলায় আলোর দূষণ প্রায় থাকেই না।

যারা তারার আলো দেখতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য ইউটাহ-এর রেইনবো ব্রিজ ন্যাশনাল মনুমেন্টেও রয়েছে দারুণ সুযোগ।

তবে এখানে যেতে হলে লেক পাওয়েলে নৌকায় চড়ে যেতে হয় এবং পরে এক ঘণ্টার মতো হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয়।

কানাডার ওয়াটারটন-গ্লেসিয়ার ইন্টারন্যাশনাল পিস পার্কও একটি উল্লেখযোগ্য স্থান।

এটি কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অবস্থিত। এখানকার পাহাড় আর প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য রাতের আকাশকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

কুইবেকের মন্ট মেগ্যান্টিক ন্যাশনাল পার্কে রয়েছে একটি অ্যাস্ট্রো-ল্যাব মিউজিয়াম, যেখানে অরোরা বোরিয়ালিস বা রাতের আকাশের আলো দেখা যায়।

যদি সহজে রাতের আকাশ দেখতে চান, তাহলে নিউ ব্রান্সউইক-এর কথা ভাবতে পারেন।

এখানকার শহরগুলোতেও সহজে অন্ধকার আকাশ খুঁজে পাওয়া যায়। এছাড়াও, বিভিন্ন স্থানে স্টার পার্টি বা তারকা উৎসবের আয়োজন করা হয়।

আকাশ পর্যবেক্ষণে উৎসাহীদের জন্য, বিভিন্ন স্থানে গাইড ট্যুর এবং কর্মশালার ব্যবস্থা রয়েছে।

এইসব ট্যুরে, অভিজ্ঞ গাইডরা রাতের আকাশের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেন এবং টেলিস্কোপের মাধ্যমে তারা দেখান।

ডার্কস্কাই ইন্টারন্যাশনাল-এর মতে, রাতের আকাশ দেখার সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে।

সাদা ফ্ল্যাশলাইটের পরিবর্তে লাল আলো ব্যবহার করা ভালো। এছাড়াও, নতুন চাঁদ ওঠার সময়ে রাতের আকাশ সবচেয়ে পরিষ্কার থাকে।

বর্তমানে, ‘অ্যাস্ট্রো-ট্যুরিজম’-এর ধারণা বাড়ছে।

এর ফলে, শহর এবং গ্রামের মানুষ রাতের আকাশ দেখার সুযোগ পাচ্ছে। ডার্কস্কাই ইন্টারন্যাশনাল এই ধরনের পর্যটনের জন্য কিছু নিয়ম তৈরি করেছে, যা পরিবেশ এবং স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে উৎসাহিত করে।

আলোর ঝলমলে এই পৃথিবীতে, রাতের আকাশের নক্ষত্রদের দেখতে পাওয়া এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা।

তাই, যারা রাতের আকাশ ভালোবাসেন, তারা এইসব স্থানগুলোতে গিয়ে প্রকৃতির এই অপরূপ রূপ উপভোগ করতে পারেন।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *